নিজস্ব প্রতিবেদক
চুয়াডাঙ্গায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ। ২০২৪ সালে জেলার চারটি উপজেলায় মোট ৮১০৬টি বিয়ে হলেও তালাক হয়েছে ৫৫২১টি, যা মোট বিবাহের প্রায় ৬৮ শতাংশ।
জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্যমতে, চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলায় ২০২৪ সালে বিয়ে হয়েছে যথাক্রমে ২,২২৬টি, ২,৪৩১টি, ১,৮২৮টি ও ১,৬২১টি। অথচ তালাক হয়েছে ২,১৭৭টি, ১,২৩৭টি, ৯২১টি ও ১,১৮৬টি।
এই হিসেবে চুয়াডাঙ্গা সদরেই বিবাহবিচ্ছেদের হার সবচেয়ে বেশি। বিয়ের সংখ্যা আর তালাকের সংখ্যা প্রায় সমান।
জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তালাকের অধিকাংশ উদ্যোগ নারীদের পক্ষ থেকেই আসছে। বিশেষ করে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে তালাকের প্রবণতা বেশি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কাজী মো. সামসুল হক জানান, বর্তমান সময়ে বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম প্রধান কারণ পরকীয়া। এছাড়া পারিবারিক দ্বন্দ্ব, স্বামীর বিদেশে বসবাস, অবিশ্বাস ও সহনশীলতার অভাবও এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।
জীবননগর উপজেলার বাসিন্দা মুনিয়া (ছদ্মনাম) বলেন, আমার স্বামী মাদকাসক্ত ছিলেন। কাজ করতেন না, মারধর করতেন। বাধ্য হয়ে তালাক দেই।
আরিফুল ইসলাম বলেন, স্ত্রী সারাদিন ফেসবুকে সময় দিত। একদিন মোবাইল নিয়ে নিই, এরপর সে বাবার বাড়ি চলে যায়। মাসখানেক পর তালাক পাঠায়।
আলমডাঙ্গার আসমত আলী বলেন, বউ পরকীয়া করতো এবং সংসারে তার মনোযোগ ছিল না। এ কারণে তাকে তালাক দিয়েছি।
চুয়াডাঙ্গা সদরের রাজ বলেন, পরিবারের অমতে সম্পর্কের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু স্ত্রীর পরিবার মেনে না নেয়ায় আর সংসার হয়নি। পরে স্ত্রী পরিবার কর্তৃক তালাকনামা পাঠিয়েছে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-আমিন বলেন, বাল্যবিবাহ, পরকীয়া, হিংসা, পারিবারিক অজ্ঞতা ও অশিক্ষা এসব কারণেই তালাক বাড়ছে। সচেতনতামূলক সভা করছি, আর দ্রুত তালাকের মূল কারণ চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা গবেষক অধ্যক্ষ সাজেদা পারভীন বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তালাক প্রবণতা হ্রাস করা সম্ভব। সরকারের নেয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়নে আরও মনোযোগী হতে হবে।