মহব্বত আলী, চুড়ামনকাটি (যশোর): নতুন কমিটি গঠন হলেও দূরত্ব কমছে না চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির দু’গ্রুপের নেতাকর্মীদের মাঝে। বরং নতুন কমিটি গঠনের পর থেকে তুষের আগুনে পুড়ছে ইউনিয়ন বিএনপি। ভাটা পড়েছে দলীয় সকল কর্মকা-ে। সম্মেলন একটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা বয়কট করার কারণে নতুন কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমুলের নেতাকর্মীরা। বর্তমানে প্রকাশ্যে দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ এ অবস্থার জন্য দায়ী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ দু’নেতা। কৌশলে এই দুই নেতা কমিটিতে দলীয় ত্যাগী নেতা কর্মীদের বাদ রেখে সম্মেলন করে কমিটি গঠন করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলনে ৪৫৯ জন কাউন্সিলরের ভেতর ২৩০ জনই অনুপস্থিত থাকা প্রমাণ করে দলীয় কোন্দল কতটা প্রকট চুড়ামনকাটিতে।
গত ১ এপ্রিল যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সম্মেলনে দু’টি প্যানেলে ভোট যুদ্ধে নামার কথা থাকলেও একটি প্যানেলের নেতাকর্মীরা হঠাৎ নিজেদের সরিয়ে নেয়। কারণ হিসাবে জানা গেছে, চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও তিন বারের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তারকে জেলা ও থানা বিএনপির শীর্ষ দু’ নেতা এবারের কমিটিতে সভাপতি পদে নির্বাচন করতে নিষেধ করেন ও প্রলোভন দেখান জেলা বা থানা কমিটিতে তাকে আনা হবে যেকোন একটি পদে।
ওই দুই নেতা আব্দুস সাত্তারের বাসায় বসে সিদ্ধান্ত নেন ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন হবে না। তারা তাকে নির্বাচনে আসতে নিষেধ করেন। মূলত ওই দুই নেতার কথামত আব্দুস সাত্তার সভাপতি প্রার্থী থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। আব্দুস সাত্তার সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন না এটা এলাকায় প্রচার হলে ক্ষোভ দেখা দেয় ইউনিয়নের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে। এ সময় পুরো সম্মেলনই বয়কট করেন সাত্তার পক্ষীয় নেতাকর্মীরা। নতুন কমিটি কিছুতেই মানতে পারছে না ইউনিয়ন বিএনপির বড় একটি অংশের নেতাকর্মীরা।
সম্মেলনে ৯টি ওয়ার্ড কমিটির ৪৫৯ জন কাউন্সিলর ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের কথা থাকলেও ২৩০ জন কাউন্সিলর অনুপস্থিত থাকায় প্রশ্ন ওঠে কমিটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। তৃনমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ ইউনিয়নের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দলের সবচেয়ে দুর্দিনের কান্ডারী সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তারকে বাদ রেখে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটি তারা মানেন না। তাদের অভিযোগ জেলা ও থানা বিএনপির দুইজন নেতা কৌশলে এই নতুন কমিটি গঠন করিয়েছেন।
এবারের কমিটিতে বিগত দিনের কান্ডারী ও নির্যাতিতদের মূল্যায়ন করা হয়নি। যারা দলের কঠিন দুঃসময়ে সামনে থেকেই সকল দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের বিপদে আপদে সব সময় পাশে থেকেছেন তাদেরকে বাদ রাখা হয়েছে এবারের কমিটিতে।
এ ব্যাপারে সাবেক সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, এবারের কমিটিতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাহিদার প্রতিফলন ঘটেনি। যার কারণে ৪৫৯ জন কাউন্সিলর ভোটারের ভিতর ২৩০ জন সম্মেলন বয়কট করেন। তবে কি কারণে তিনি প্রার্থী হননি সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।
নতুন নির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইদ জানান, সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এবারের কমিটি ভোটের মাধ্যমে করা হয়েছে। সরাসরি তৃণমূলের নেতাকর্মিদের ভোটের মাধ্যমেই আমরা পুরো প্যানেল ধরে বিজয়ী হয়েছি। তারা কমিটিতে আসতে পারবেনা জেনেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়নি।
সাধারণ সম্পাদক মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, এবারের কমিটিতে ত্যাগী ও অবহেলিতরাই স্থান পেয়েছে।
কমিটির সাবেক নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব গাজী জানান, বড় দলে লবিং গ্রুপিং থাকতেই পারে। চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সকল বিএনপির নেতাকর্মীরাই জননেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের অনুসারী।
সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নূর উন নবী চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে বলেন, তফসীল ঘোষণার মাধ্যমে দিন দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে কে আসলো আর কে আসলো না সেটা মূখ্য বিষয় না। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।