আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ, কেশবপুর
উপজেলাব্যাপী চেতনানাশক পার্টির ভয়ে আতঙ্কে সময় পার করছেন কেশবপুরবাসী। চেতনানাশক স্প্রে ছিটিয়ে অজ্ঞান করে লুট করে নিচ্ছে নগদ টাকা ও গহনা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৩ টি বাসা লুট হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সবাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। কেউ কেউ সুস্থ হলেও দীর্ঘদিন থাকছে চেতনানাশকের প্রভাব। থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি। ফলে জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতে কিংবা দিনে নিখুঁতভাবে লুট করছে এই লুটেরারা। কেশবপুর থানা পুলিশ গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সভা সেমিনার শুরু করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২১ আগস্ট সোমবার রাতে আবারো কেশবপুর সদর ইউনিয়নের সুজাপুর গ্রামের এইচ এম রাসেলের (৪৩) বাড়িতে প্রবেশ করে খাবারের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে বাড়ির সকল সদস্যকে অজ্ঞান করে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ৩০ হাজার টাকা ও ৩ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে এইচ এম রাসেল (৪৩) তার স্ত্রী রহিমা খাতুন (৩১) ও একমাত্র মেয়ে রোদনী তাবাচ্ছুম (১৪) ঘরের মালামাল এলোমেলো ও নিজেরা অসুস্থতা বোধ করলে এলাকাবাসী ছুটে এসে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তারা বর্তমানে আশংকামুক্ত।
একই দিন রাতে পার্শ্ববর্তী বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের নিখিল সেনের বাড়িতে প্রবেশ করে চেতনানাশক মিশিয়ে অজ্ঞান করে বাড়ির মালামাল লুটপাটের চেষ্টা করে। এ ঘটনায় বাড়ির সদস্য নিখিল সেন (৪৫) তার স্ত্রী পিংকি সেন (৩২) ও তার মেয়ে প্রান্তী সেন অচেতন হয়ে পড়ে। মালামাল ক্ষয়ক্ষতি না হলেও তারা বর্তমানে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছে।
এছাড়াও, গত ১৬ আগস্ট উপজেলার ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের সরাপপুর গ্রামে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পলাশ মল্লিকের গ্রামের বাড়িতে বাড়ির সদস্যদের অচেতন করে প্রায় ৩ ভরি সোনা ও ২২ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভাইস চেয়ারম্যানের পিতা আনন্দ মোহন মল্লিক (৬০), মাতা ঝর্না রানী মল্লিক ও পিসি করুনা রানী (৫৫) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে গুরুতর আসুস্থ আনন্দ মোহন মল্লিক খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে গৌরিঘোনা ইউনিয়নের একটি বাড়িতে অচেতন করে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বলেন, অজ্ঞাতনামারা রাতের আঁধারে বসত ঘরে প্রবেশ করে খাবারের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে দিলে সেই খাবার খেয়ে ভিকটিমগণ অচেতন হয়ে পড়ে সেই সুযোগে এ চক্রের সদস্যরা বসত ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। অজ্ঞান করে চুরির ঘটনায় আজ পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। খবর পেয়ে থানা পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগ করার পরামর্শ দেয়। চুরির ধারাবাহিকতায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে উপজেলাবাসী।
কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়াও থানা পুলিশের উদ্যোগে মঙ্গলবার বিকেলে বালিয়াডাঙ্গা দেবালয় মোড়ে অজ্ঞান পার্টির কবল থেকে এলাকাবাসীকে নিরাপত্তার জন্য পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলাব্যাপী এমন পথসভা থানা পুলিশের উদ্যোগে করা হবে বলে জানান ওসি।