নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের চৌগাছা উপজেলা নির্বাচন অফিসের সার্ভার থেকে বিদেশ থাকা ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করেছেন একই অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ইয়াসিন আরাফাত সুমন (৩০)। নির্বাচন কমিশনের সচিবালয় তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে তাকে চাকরিচূত করা হয়েছে। করা হয়েছে মামলা। গাঢাকা দেয়ার সময় বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে যশোর বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে (র্যাব)।
র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার এম নাজিউর রহমান জানান, যশোর জেলার চৌগাছা নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের দায়িত্বে থেকে ইয়াছিন আরাফাত সুমন জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। তার নামে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) চৌগাছা থানায় মামলা করেন উপজেলা নির্বাচন অফিসার সেলিম রেজা। মামলার খবরে ইয়াসিন আরাফাত সুমন গাঢাকা দিচ্ছিলেন। তিনি বৃহস্পতিবার যশোর থেকে বিমানে ঢাকায় যেতে টিকিট কাটেন। বোয়িং পাস করার সময় বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ইয়াসিন আরাফাত সুমন চৌগাছা উপজেলা নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। তার বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার লাউজানি গ্রামের কাজী আবু সিদ্দিকের ছেলে।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাচন অফিসার সেলিম রেজা বলেন, তার অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ইয়াসিন আরাফাত সুমন গেল জানুয়ারি মাসে ইতালি থাকা তার মামাতো ভাই (চাচীর ভাইপো) যশোর সদরের তেঘরি গ্রামের (বর্তমানে ইতালি) মোহাম্মদ হযরত আলীর জাল এনআইডি করার জন্য সার্ভার রুমে প্রবেশ করেন। তিনি এনআইডি ডাটাবেজে অন্তর্ভূক্তির জন্য ভোটার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। ফিঙ্গার প্রিন্ট দেন ঝিকরগাছার পৌর এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার টুম্পা (এনআইডি ৬০০৮১৭৪২৮৩) নামে এক নারীর।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম উপলক্ষে চৌগাছা নির্বাচন অফিসের অধীনে ২২টি ওয়ার্কস্টেশন নির্বাচন করা রয়েছে। একটি স্টেশন ব্যবহার করে ভোটারের তথ্য ইমপোর্ট ও আপলোড করতে বাধার সম্মুখীন হয়নি। এছাড়া মোহাম্মদ হযরত আলীর বাড়ি যশোর সদরের তেঘরিয়া গ্রামে হলেও দেখানো হয় চৌগাছা পৌরসভার ইছাপুর গ্রামে। এজন্য কোনভাবে সার্ভারে আটকায়নি। তবে অটোমেটেড ফিঙ্গার আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এএফআইএস) ম্যাচিংয়ের সময় ডুপ্লিকেট ম্যাচিং হয়। তখন প্রকল্পের আইটি শাখা থেকে ভোটারদ্বয়ের অধিকতর যাচাই করতে হযরত আলীর ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া যায়। তখন কোন আইডি থেকে নতুন ভোটার রেজিস্ট্রেশন হয়েছে তা পরীক্ষা করলে ধরা পড়ে।
এ বিষয়ে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসের (আইডিইএ) প্রকল্প দপ্তর থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে সত্যতা পেয়ে ২ ফেব্রুয়ারি কমিটির আহ্বায়ক ও আইডিইএ প্রকল্প পরিচালক (আইটি) স্কোয়াড্রন লিডার সাদ ওয়াজেদ তানভীর প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই বছর আগে বিদেশ যাওয়া মোহাম্মদ হযরত আলীর জাল এনআইডি করতে সার্ভারে তথ্য আপলোড করেন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ইয়াছিন আরাফাত সুমন। তদন্ত কমিটির কাছে অভিযুক্ত সুমন স্বীকারও করেছেন।
তদন্ত কমিটির কাছে সুমন লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, মোহাম্মদ হযরত আলী পানি পথে বিদেশ যাওয়ায় পাসপোর্ট করতে পারছিলেন না। পাসপোর্ট করতে না পারায় বিদেশে তিনি কষ্টে ছিলেন। তার পিতামাতার কন্নাকাটি ও অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে জাল এনআইডি করা হয়েছে।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাচন অফিসার সেলিম রেজা আরও বলেন, ইয়াছিন আরাফাত সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে এক স্মারকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ ফেব্রুয়ারি মামলা করা হয়।