নিজস্ব প্রতিবেদক
চৌগাছার মাকাপুর গ্রামের আলোচিত হায়দার আলী হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ব্যারিস্টার ছেলে মর্তুজা রাসেলের পক্ষে দেয়ায় নারাজি আবেদন করা হয়েছে। নিহতের স্ত্রী লতিফা হায়দারের আবেদনের ভিত্তিতে থানা পুলিশের দেয়া প্রতিবেদনটি নামঞ্জুর করে পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশকে আদেশ দেয়া হয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদ এই আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, বাদীর আইনজীবী কাজী সেলিম রেজা ময়না।
এর আগে গত ২২ নভেম্বর হায়দার আলীকে হত্যার অভিযোগে ব্যরিস্টার ছেলেসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে এই মামলাটি করেছিলেন তার স্ত্রী লতিফা হায়দার।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, আসামি লন্ডল প্রবাসী ব্যারিস্টার মর্তুজা রাসেল ছেলে ও অপর আসামিরা আত্মীয় স্বজন। হায়দার আলী পৈত্রিক ও ক্রয় সূত্রে সাড়ে ১৩ একর জমির মালিক ছিলেন। ওই জমি আসামি মর্তুজা রাসেল তার নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য তার পিতার উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। রাসেল লন্ডন প্রবাসী হওয়ায় আসামি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলের মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য চাপ অব্যাহত রাখেন। এই ঘটনায় ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর চৌগাছা থানায় একটি জিডি করা হয়। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাসেল লন্ডন থেকে দেশে আসেন। এরপর তিনি তার পিতাকে মায়ের হেফাজত থেকে নিজের জিম্মায় নেয়ার জন্য আদালতে মামলা করেন। আদালত আসামি মর্তুজার হেফাজতে দিয়ে দেয়। এরপর অন্য আসামিরা মর্তুজার নামে সব জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার জন্য চাপ দেয়। জমি রেজিস্ট্রি করতে ব্যর্থ হয়ে আসামিরা হায়দার আলীকে মৃত্যু হয় এমন ওষুধ সেবন করিয়ে অসুস্থ করে ফেলে। এরপর চলতি বছরের ১ অক্টোবর হায়দার আলীকে যশোর ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৮ অক্টোবর রাতে ছাড়পত্র নিয়ে নেয় আসামিরা। পরবর্তীতে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলের হেফাজতে মৃত্যু নিশ্চিত করে ওইদিন গভীর রাতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হায়দার আলীকে মৃত ঘোষণা করে।
এ ঘটনায় চৌগাছা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও তা গ্রহণ করেনি থানা কর্তৃপক্ষ। এরমাঝে আসামিরা তড়িঘড়ি করে ময়না তদন্ত ছাড়াই হায়দার আলীর লাশ পরিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করে। মরহুম হায়দার আলীর মৃত্যু সনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র যোগাড় করে হায়দার আলীর স্ত্রী লতিফা হায়দার গত ১১ নভেম্বর লন্ডল প্রবাসী ব্যারিস্টার ছেলে মর্তুজা রাসেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
আসামিরারা হলেন, মরহুম হায়দার আলীর লন্ডন প্রবাসী ব্যারিস্টার ছেলে একেএম মর্তুাজা রাসেল, ঝিকরগাছার ছুটিপুর বাসস্টান্ড এলাকার মৃত বজলুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে বিশাল, পুড়োপাড়া গ্রামের মৃত মঈনুদ্দিনের স্ত্রী শাহিদা বেগম, ছেলে হাসিবুল ইসলাম, বাদেখানপুর গ্রামের মৃত তরিকুল ইসলামের ছেলে রাজীব হোসেন, মৃত মহতাব উদ্দিনের স্ত্রী হামিদা বেগম, দুই ছেলে মাসুম হোসেন, মজনু মিয়া এবং চৌগাছার মাকাপুর গ্রামের মৃত মগরেব আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম।
বিচারক অভিযোগটি গ্রহণ করে এই ঘটনায় চৌগাছা থানায় আর কোন মামলা হয়েছে কিনা, হয়ে থাকলে অগ্রগতিসহ প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিলের আদেশ দিয়েছিলেন ওসিকে। চৌগাছা থানা পুলিশের দেয়া প্রতিবেদনটি ব্যারিস্টার ছেলে রাসেলের পক্ষে হওয়ায় তা বাতিলের জন্য আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাদী। বিচারক শুনানি শেষে সিআইডি পুলিশকে অভিযোগের তদন্ত করে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ দিয়েছেন।
