কিশোরী উদ্ধার, আটক ১
৮ মাসে ৬ পাচার মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক: মানবপাচারের অন্যতম রুট যশোরের চৌগাছা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার থামছেই না। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতেও উপজেলার বর্ণি সীমান্ত দিয়ে এক কিশোরীকে পাচারের চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটক করেছে পাচারে জড়িত সোলাইমান হোসেন (৪৯) নামে একজনকে। এ ঘটনায় শুক্রবার চৌগাছা থানায় মামলা করেছেন বিজিবির বর্ণি বিশেষ ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার গোলাম মাওলা। এ নিয়ে গত আট মাসে এ নিয়ে চৌগাছা থানায় ৬টি মানবপাচার মামলা হয়েছে। আর অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছে অন্তত দশ।
এরআগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রবিবার দিবাগত গভীর রাতে (২৮ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বড়আন্দুলিয়া মাঠ থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে একত্রিত করা এক নারী, তার দুই শিশু সন্তান এবং দুই কিশোরসহ ৬ জনকে উদ্ধার করে আন্দুলিয়া ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা। সে ঘটনায় বড় আন্দুলিয়া গ্রামের ইউনুস আলী (৩০) ও জহুরুল ইসলাম (২৫) নামে দুই পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বর্ণি বিশেষ ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যদের নিয়মিত টহল চলাকালীন বিজিবি সদস্যরা গোপনে সংবাদ পান দালাল চক্র কিছু নারীকে অবৈধভাবে ভারতে পাচার করছে। ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে অভিযান চালালে পাচারকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় বিজিবি সদস্যরা তাড়িয়ে বর্ণি গ্রামস্থ মেইন পিলার-৪৬ এর দেড় কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বর্ণি বেনাগাড়ি মোড় বটতলা থেকে সোলাইমান হোসেন (৪৯) নামে এক মানবপাচারকারীকে আটক করে। সোলাইমান পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর বড়বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। এসময় বিজিবি সদস্যরা পাচারের শিকার ঢাকার যাত্রাবাড়ি মুন্সিরচর মানিকনগর এলাকার এক কিশোরীকে (১৭) উদ্ধার এবং একটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক জব্দ করে।
বিজিবির জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরী জানায়, ভারতে ভালো কাজ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে তাকে ভারতে পাচার করা হচ্ছিলো। আর ‘পাচারকারী’ সোলাইমান হোসেন বিজিবির জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, দালাল চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারীদের নিয়ে ভারতে পাচার করে থাকে।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে চৌগাছা সীমান্তের কিছু অসাধু ব্যক্তি ভারতে মানবপাচার এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। হতদরিদ্রদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে এসব পাচারকারীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী, শিশু, কিশোরসহ বিভিন্ন পেশার মানুষদের টাকার বিনিময়ে ভারতে ভালো কাজ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে দেয়। এছাড়া এই পাচারকারীরা টাকার বিনিময়ে অবৈধ অনুপ্রবেশে সহায়তা করে থাকে। গত ৮ জানুয়ারি শহরের পাঁচনমানা এলাকায় পাচারের উদ্দেশ্যে রাখা ৪ যুবতীকে উদ্ধার ও তিন পাচারকারীকে গ্রেফতার করে র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান (র্যাব)। সে ঘটনায়ও চৌগাছা থানায় মামলা হয়। গত ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের তিনটি ঘটনায় পাচারকারীসহ ৮ নারী ও পুরুষকে গ্রেফতার করে বিজিবি। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়।
চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, গ্রেফতার এবং উদ্ধারকৃত দুই জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ওসি আরো বলেন, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত গত আট মাসে ছয়টি মামলা হয়েছে। যার তিনটির আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে।