নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে গর্ববোধ করেন সবাই। আর নেতৃত্বের শীর্ষ পদে আসীন হলে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান তারা। যশোরের দুই মেধাবী সন্তান তেমনি হলেন ইতিহাসের অংশ। এই জনপদের মাটিতে বেড়ে উঠা লেখক ভট্টাচার্য ও কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন উঠেছেন ছাত্ররাজনীতির শিখরে। লেখক ভট্টাচার্য আগেই আসীন হয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে। আর কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন ১৭ এপ্রিল পেয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রদলের সভাপতি পদ। তার পদ পাওয়ার পর ছাত্ররাজনীতি নিয়ে নতুনভাবে আলোচনা হচ্ছে যশোরে। তাদের মেধা, শ্রম ও ত্যাগের প্রশংসা করছেন সকলেই।
কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবনের বাড়ি জেলার কেশবপুরের চিংড়া গ্রামে। ২০০৩ সালে কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে। কিছুদিনের মধ্যেই ছাত্রদল কর্মী হিসেবে হল ও বিভাগের সহপাঠীদের মধ্যে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি।
রওনাকুল ইসলামের বাবা কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম। তিনি কেশবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান। সর্বশেষ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে সময় সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলেও পরে দল তাকে আবার ফিরিয়ে নেয়। রওনাকুলের বড় ভাই মুস্তাফিজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তিনি এখন দল থেকে বহিষ্কৃত। আরেক ভাই মোজাহিদুল ইসলাম উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। আর ছোট ভাই আযাহারুল ইসলাম মানিক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক।
রোববার রওনাকুল ইসলাম ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার খবর প্রকাশ হলে তা কেশবপুরের রাজনৈতিক মহলে প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। তবে শ্রাবনের এই রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখাননি তার বাবা ও ভাইয়েরা। কারণ শ্রাবণ ছাত্রদলের রাজনীতি করায় বাড়িতে তার যোগাযোগ নেই। ১৩ বছর ধরে তিনি বাড়িতে যান না। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে তিনি কেশবপুরে ভোট চাইতে এলেও বাড়ি যাননি। ছেলের ছাত্রদল সভাপতি হওয়া নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই বলে জানান রফিকুল ইসলাম।
অন্যদিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা লেখক ভট্টাচার্যের বাড়ি যশোরের মণিরামপুরে। যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগে (২০০৮-০৯ সেশনে) ভর্তি হন তিনি। জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র লেখক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এদিকে বাংলাদেশের প্রধান দুই ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ পদ এখন যশোর জেলার দখলে বলেও অনেকে ফেসবুকে মন্তব্য করছেন। দুইজনকেই সাধুবাদ জানিয়ে ইতিবাচক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার আহবান জানাচ্ছেন অনেকে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশের ছাত্রমৈত্রীর এক সময়ের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা যশোরের সন্তান মাহমুদ হাসান বুলু বলেন, ছাত্রদের অধিকার ও ছাত্রনেতৃত্বের বিকাশ হওয়ার মতো এখন পরিবেশ নেই। গত ১৫ বছর ধরে সে ধরনের আন্দোলন তিনি দেখেননি। তবে যশোরের দুই সন্তান দুটি ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই।
এদিকে বিভিন্ন আড্ডা কিংবা সভা-সমাবেশে জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকদের প্রায় সময়ে ছাত্ররাজনীতির সোনালী দিনের কথা বলতে শোনা যায়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি রাজনীতির বটবৃক্ষের ছায়ায় বেড়ে উঠার সুযোগে হয়ে উঠেন দক্ষ নেতা। ছাত্রদল নেতা শ্রাবণ ও ছাত্রলীগ নেতা লেখক তেমনই দক্ষ নেতা হয়ে যশোরবাসীর মুখ উজ্জ্বল করবেন সেই প্রত্যাশা অনেকের।