নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘ক্ষণিকা’। এটি পিকনিক কর্নার। যশোর-খুলনা মহাসড়কের গাঁ ঘেঁসে সদর উপজেলার রামনগরে অবস্থিত। বিশাল দীঘি আর জীব-বৈচিত্রের সমন্বয়ে গড়ে উঠা পিকনিক স্পটটি এক সময় মানুষের বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রস্থল ছিল। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ আসতো এখানে।
গত দুই দশকের ব্যবধানে অযত্ন অবহেলায় ক্ষণিকা পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। জনবল সংকটের অজুহাতে ভ্রমণ পিপাষুদের জন্য ক্ষণিকা উন্মুক্ত করছে না সওজ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিক কমিটির সদস্যরা। তারা বলছেন, পিকনিক কর্নারটি জনসাধারণের জন্য খুলে না দেয়ায় সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি মানুষ বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) যশোরের আওতাধীন ক্ষণিকা পিকনিক কর্নার তালাবদ্ধ করে রেখেছে। গত ৪ মাস আগে সওজ ক্ষণিকা পিকনিক কর্নারের মধ্যে ‘ওয়েট স্কেল’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু নাগরিক কমিটির আন্দোলনের কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। তবে জনসাধারণের জন্য তারা উন্মুক্ত করতে নারাজ।
১৯৬২ সালে অবাঙ্গালি প্রকৌশলী ফারুকির উদ্যোগে ৫৬ বিঘা জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্ষণিকা পিকনিক কর্নার। যা যশোরবাসীসহ দেশের মানুষের বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এখানে বিশাল দীঘি ছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের গাছ-গাছালি ও জীববৈচিত্র্য। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই জৌলুস হারাতে থাকে ক্ষণিকা।
এ অবস্থায় ৯০ দশকে এসে উৎসাহে ভাটা পড়ে দর্শনার্থীদের মাঝেও। এক পর্যায়ে ঐতিহ্যবাহী বিনোদনকেন্দ্রটি ভরে যায় গাছ-পালা আর ঝোপঝাড়ে। ২০ বছরের বেশি হয়ে গেছে এখানে আর কেউ পিকনিক করতে যান না। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা এবং পরিবেশবাদীরা প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী পিকনিক কর্নারটির জৌলুস ফিরাতে ভূমিকা রাখতে। কিন্তু তাদের সেই দাবি পূরণ হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, অযত্ন আর অবহেলায় ক্ষণিকা পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। এ অবস্থায় তারা চান ক্ষণিকা তার জৌলুস ফিরে পাক। আবার দর্শণার্থীদের কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে উঠুক।
পিকনিক কর্নারের অদূরে চা-পান বিক্রি করেন সুলেমান হোসেন। তিনি বলেন, একসময় ক্ষণিকায় ছেলে-মেয়েরাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ আসতো। মানুষের ভিড়ে জমজমাট থাকতো স্থানটি। সেই পরিবেশ এখন আর নেই। আমরা চাই, সরকার আবার এই পিকনিক কর্নারটি চালু করুক।
তৌফিকুর রহমান নামে আরেক চা বিক্রেতা বলেন, আগে কর্নারটির কারণে ব্যবসা হতো আমাদের। দর্শক না আসায় তা বন্ধ করে চায়ের দোকান দিয়েছি। বিনোদন কেন্দ্রটি চালু করা হলে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যেও সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
ক্ষণিকার জীব-বৈচিত্র্য অক্ষুন্ন রেখে আধুনিকায়ন করার জন্য বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়ে আসছেন ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন’ যশোরের নেতৃবৃন্দ।
এই বিষয়ে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের যশোরের সমন্বয়ক শেখ মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘ক্ষণিকা যশোরবাসীর ঐতিহ্য। এখানে নানা জাতের গাছ-গাছালির সঙ্গে বিভিন্ন পাখির অভরায়ণ্য। জনসাধারণের জন্য খুলে দিলে একদিকে সরকারের রাজস্ব বাড়বে অন্যদিকে মানুষ বিনোদনের জন্য যাবে ক্ষণিকায়।
জনউদ্যোগ যশোরের সভাপতি আইইবি’র কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি এমআর খায়রুল উমাম বলেন, ক্ষণিকা পিকনিক কর্নার যশোরবাসীর ঐতিহ্য। এটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। তা না হলে যশোরবাসীকে সাথে নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ক্ষণিকা পিকনিক কর্নারের জীব-বৈচিত্র্য যাতে বিনষ্ট না হয় সেই কারণে ওজনস্কেল বসানো থেকে আমরা সরে এসেছি। এই মুহূর্তে চালু করলে সরকারের সম্পদ বিনষ্ট হবার আশংকা রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে জনবল সংকট। যেকারণে আপাতত ক্ষণিকা চালু করতে পারছি না।