নিজস্ব প্রতিবেদক
জমে উঠেছে দেশের বৃহত্তম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাট। গতকাল শনিবার ঈদ পরবর্তী তৃতীয় হাটে চামড়া বেচাকেনা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। এরমধ্যে গরুর চামড়া রয়েছে ১৮ হাজার আর ছঅগলের ১২ হাজার। হাটের ইজারাদার বলছেন, এদিন রাজারহাটে দেড় কোটি টাকার টাকার হাতবদল হয়েছে। গতকালকের হাটে ছিল ক্রেতা ও বিক্রেতাদের পদচারণায় ঠাসা। এর আগে দুটি হাট হলেও তেমন বেচাকেনা হয়নি। সবাই গতকালকের হাটের দিকে চেয়েছিলেন।
গত ১ জুলাই রাজারহাটে প্রথম হাটবার ছিল। ওই সময় তেমন বেচাকেনা হয়নি। মোকামে আসা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ওইদিন বলেছিলেন, এবারও বাড়তি দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন তারা। তাদের লোকসান আরও বাড়িয়েছে লবণের চড়া দাম। ফলে প্রত্যেকটি চামড়ায় মোট অংকের লোকসান গুণতে হয়েছে তাদের। তবে আড়তদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, শনিবারের হাটে ভালো দামে চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। মানভেদে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে। ট্যানারি মালিক ও পাইকাররা হাট থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছেন।
শনিবার সরেজমিনে চামড়ার মোকামে দেখা গেছে, যশোরসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা হাটে চামড়া নিয়ে এসেছেন। সেসব চামড়া তারা ছাগল ও গরুর পৃথক করে স্তুপ করে রেখেছেন। স্তুপ করা চামড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকার ও ট্যানারি শিল্পের প্রতিনিধিরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। তাদের পদচারণায় হাট ছিল জমজমাট।
পছন্দ অনুযায়ী চামড়া ক্রয় করছেন স্থানীয় ও বাইরের আড়তদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা। এ দিন ছাগলের চামড়া প্রতি পিস ৩০ টাকা থেকে একশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আর গরুর চামড়া ৫শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। লবণ ও শ্রমিক খরচ বাড়তি হওয়ায় অনেকের লাভবান হতে পারেনি বলে জানিয়েছেন।
নড়াইলের কিশোর কুমার নামে একজন বলেন, গতকাল তিনি হাটে ২শ পিস গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন। ভালো মানের চামড়ার দাম পেয়েছে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কেনা ও লবণের খরচ বেশি হওয়ায় তেমন লাভ হয়নি বলে তিনি জানান।
যশোরের অভয়নগর উপজেলা থেকে আসা লস্কর মোড়ল বলেন, গতকালের হাটে আমি ৩শ পিস গরু ও ৬শ পিস ছাগলের চামড়া এনছিলাম। গরুর চামড়া ৭শ থেকে ১২ টাকা পিস হিসেবে এবং ছাগলের চামড়া ৬০ থেকে একশ টাকা পিস বিক্রি করেছি। এতে আমার তেমন লাভ না হলেও লোকসানের হাত থেকে বেঁচে গেছি।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কালিনগর গ্রামের নগেন বিশ্বাস বলেন, ‘হাটে ৫০০ পিস গরুর চামড়া এনেছিলাম। প্রতিটি চামড়া বিক্রি করেছি ৫শ থেকে ৯শ টাকা দরে। লবণ, শ্রমিক খরচ ও পরিবহন বাবদ খরচ বেশি হওয়ায় সীমিত লাভ হয়েছে। তাতে আমি খুশি। কেননা যেভাবে চামড়ার বাজার ট্যানারি মালিকরা নিয়ন্ত্রণ করছে, ভবিষ্যতে আমাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ী টিকে থাকবে না।
পাইকারী ব্যবসায়ী মোস্তাক হোসেনের দাবি, শনিবার হাটে প্রচুর চামড়ার সরবরাহ ঘটেছে। দামও ভালো গেছে। তবে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা অদক্ষতার কারণে লোকসান গুনছেন। সরকারি চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও চামড়ার মান নির্ধারণ করে দেননি। এজন্য পাইকারী ব্যবসায়ীরা মান যাচাই করেই চামড়ার দাম নির্ধারণ করছেন। যারা ভালো মানের চামড়া এনেছেন, তারা দামও ভাল পাচ্ছেন।
বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন মুকুল বলেন, ঈদের পরের দুটি হাটে তেমন বেচাকেনা না হলেও গতাকল শনিবার ছিল রাজারহাট জমজমাট। এদিন গরু ও ছাগলে মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার পিস চামড়া উঠেছিল। গড়ে দেড় কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ভালো মানের গরুর চামড়া দেড় হাজার ও ছাগলের চামড়া একশ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হয়েছে।
চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আকিল উদ্দিন বলেন, শনিবারের হাট ছিল চামড়ায় ঠাসা। বিক্রেতারা চামড়ার ভালো দাম পেয়েছেন। সব মিলিয়ে ৩০ হাজার পিস চাড়মা ছিল হাটে।
উল্লেখ্য, রাজারহাটে যশোরসহ খুলনা বিভাগের দশ জেলার পাশাপাশি ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী ও নাটোরের বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন। এই হাটে ঈদের মৌসুমে দশ থেকে ১৫ কোটি টাকার অধিক চামড়া বেচাকেনা হয়। দুইশ আড়তদার রয়েছে এখানে। এখাতে কম পক্ষে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। #
