জাহাঙ্গীর আলম
ফিরোজা খাতুন। বয়স ৬০ ঊর্ধ্ব। ভাগ্যের বিড়ম্বনায় দুই পা হারিয়েছে। পরিবারে আর কোন সদস্য না থাকাই জীবনের সায়াহ্নে এসে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে তাকে। সুফিয়া খাতুন, রাধা রানী, মোমেনা বেগম, রূপালী বেগমসহ ৬০ ঊর্ধ্ব ৪শ নারী। যাদের অনেকেরই নেই স্বামী। কারও কারও সন্তান থাকলেও নেয় না মায়ের কোন খোঁজ-খবর। প্রতি বছর মাহে রমজান উপলক্ষে এমন মায়েদের ইফতার সামগ্রী প্রদান করা হয়ে থাকে জয়তী সোসাইটি থেকে। ওই সব মায়েদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইফতার সামগ্রী প্রদান অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের প্রথমে জয়তী সোসাইটির সেমিনার রুমে মায়েরা এক নজরে তাকিয়ে ছিলেন প্রজেক্টরের দিকে। আবেগাপ্লুত হয়ে কারো কারো চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে পানি। কারণ ‘মা মানেই যে মিথ্যাবাদী’ শিরোনামে দেখানো হয় শর্ট ফিল্ম। ‘পাঁচ সদস্যর ছোট একটা সংসার। ছেলে, স্বামী-স্ত্রী ও শ^শুর-শাশুড়ি। দিন এনে দিন খাওয়া। বাড়তি কাজ করে কয়েক দিনের জমানো টাকা দিয়ে বাজার থেকে স্বামী পাঁচ টুকরা মাছ নিয়ে এসেছে। স্ত্রী রান্না শেষ করে সন্তানকে মাছ দিয়ে খাবার খাওয়ায়ে স্কুলে পাঠিয়েছে। স্বামী খাবার খেয়ে বাজারে গেছে। অন্য সবারও খাওয়া শেষ। বাকি আছে শুধু ছেলের মা। মা খেতে বসেছে। মাছ ভেঙে এক লোকমা খাবার মুখে তুলতেই মায়ের মনে পরে গেছে ছেলে যে স্কুলে, এসেই বলবে মা ও মা বড্ড ক্ষুধা লেগেছে দ্রুত খেতে দাও। মা মাছের টুকরাটা আলাদা করে রেখে দিলেন, ছেলে যে বড্ড মাছ খেতে ভালোবাসে। ছেলে স্কুল থেকে এসেই মাকে বলছে, মা ও-মা ক্ষুধা লেগেছে খেতে দাও। মা সন্তানকে খেতে দিলেন। ছেলে মাকে জিজ্ঞেস করছে তুমি তো এই মাছ ছাড়া অন্য মাছ খেতে পার না, খাবার খেয়েছ কি? মা, ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে আমি খেয়েছি বাবা। ছেলে এখন অনেক বড় হয়েছে। সংসারে আর অভাব নেই, তবে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে ওই মাকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে’।
সোমবার সকালে জয়তী সোসাইটিতে অনুষ্ঠিত সেমিনার রুমে ৬০ ঊর্ধ্ব মায়েদের মাঝে ইফতার সামগ্রী ছোলা, চিনি, চিড়ে ও মুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খালেদা খাতুন রেখা। বিশেষ অতিথি ছিলেন জয়তী ৬০ ঊর্ধ্ব নারীসেবা কর্মসূচির দাতা সদস্য ও প্রাক্তন ব্যাংক কর্মকর্তা সালেহা খাতুন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হারুন অর রশিদ। জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাধন কুমার দাস।
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন জয়তী সোসাইটির ৬০ ঊর্ধ্ব নারীসেবা কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ কুমার বিশ^াস, সদস্য মবিনুল ইসলাম মবিন, কাজী লুৎফুন্নেছা, রাফফাত আরা ডলি ও সংস্থার সকল কর্মী ও কর্মকর্তা। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জয়তী সোসাইটির পরিচালক অর্চনা বিশ^াস। সভাপতিত্ব করেন কর্মসূচির সভাপতি নূরুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সংস্থার ইউনিট ম্যানেজার শাহানাজ পারভীন রুপা।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ৮ মার্চ ১১৬ জন দুঃস্থ ৫০ ঊর্ধ্ব মাকে নিয়ে জয়তী সোসাইটি শুরু করে জয়তী ৫০ ঊর্ধ্ব নারীসেবা কর্মসূচির। বর্তমানে এই কর্মসূচির মায়ের সংখ্যা ৪০০ জন। বয়স বাড়িয়ে কারা হয়েছে ৬০ ঊর্ধ্ব। প্রতি বছর মাহে রমজান উপলক্ষে মায়েদেরকে ইফতার সামগ্রী প্রদান করে জয়তী সোসাইটি।