কল্যাণ ডেস্ক
জরুরি সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবে সরকার। তবে সেটি সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। ইসকন নিষিদ্ধের সাম্প্রতিক দাবির বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতবিরোধ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এর আগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের বিষয় জানাতেই সংবাদ সম্মেলনর আয়োজন করা হয়। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সংস্কারের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক আছে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সংস্কার কমিশন থেকে প্রস্তাব আসবে, জনগণ কথা বলবে। চূড়ান্ত সংস্কার প্রস্তাবনা হবে। সেই মোতাবেক যে পদক্ষেপ নেওয়ার তা নেব। আমরা বারবার বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব জরুরি সংস্কারগুলো শেষে নির্বাচনের তারিখ জানিয়ে দেব।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনে আমাদের যেতেই হবে। এটা আমাদের কাজ। একইসঙ্গে তাদের (রাজনৈতিক দল) সংস্কারের বিষয়ে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। তারা কখনো কখনো বলছে, একটা সময় দিয়ে দেওয়ার জন্য। সেই সময়টার ব্যাপারে আমরা অবস্থান নিতে পারছি না। কারণ সংস্কার প্রস্তাব কী আসবে, সংস্কারের কতটুকু সময় লাগবে, এটা না জেনে তো নির্বাচনের সময়টা বলে দেওয়া যাচ্ছে না। বার বার বলা হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব দিয়ে দেওয়া হবে।”
দায়িত্ব নিলে সরকারকে নানামুখী চাপের মধ্যে কাজ করতে হয় বলে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “নির্বাচন কমিশন নভেম্বর না করে জানুয়ারিতে করলেও একই প্রশ্নের সম্মুখীন (রাজনৈতিক দলের চাপ) হতাম। নির্বাচন কমিশন চাপে নয়, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই করা হয়েছে। দাবিটা নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে নয়, নির্বাচনের তারিখ ও রোডম্যাপ নিয়ে।”
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “সরকারের দিক থেকে দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে সংস্কার, যে জন্য বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছে। সংস্কারের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হওয়ার পরেই নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই এটা ঠিক হবে।”
গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজারে হামলার ঘটনাও ঘটেছে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, “বিষয়গুলো আমরা গভীর নজরে দেখছি। আমরা খুব স্বল্প সময়ে উদ্যোগ নেব। যারা মাজারে হামলার শিকার হয়েছেন তারা যেন ন্যায়বিচার পান সেই বিষয়ে সরকারের নজর রয়েছে। তিনি বলেন, দেশে যে উত্তেজনা উন্মত্তা রয়েছে। এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল ও স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসে সমাধান করতে পারব। আমরা সকলের সমর্থন কামনা করছি।”
প্রধান উপদেষ্টার কাছে রাজনৈতিক দলের দেওয়া প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহফুজ আলম বলেন, “আমাদের প্রস্তাবনা হচ্ছে কমিউনিকেশন গ্যাপ দূর করার জন্য অংশীজনদের সঙ্গে বসা। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। সামনের দিনেও যোগাযোগ করব, যাতে করে জাতীয় ঐক্য, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যায়। সেই পরামর্শ সবাই দিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে সবাই আন্তরিক। দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ থাকেলে ফ্যাসিজম ফেরত আসবে না।”
ইসকন নিষিদ্ধের আলোচনা হয়নি
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “কোন সংস্থা নিষিদ্ধ করার আলোচনা সরকারের মধ্যে হয়নি। দাবি অনেক উঠতে পারে, দাবির স্বপক্ষে মানুষ অনেক কর্মসূচিও দিতে পারে।”
তিনি বলেন, “ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে সংস্থার অপরাধ আমরা জড়িয়ে ফেলছি না। একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার ব্যাপারে একটা আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তিনি অপরাধী হতেও পারেন, নাও হতে পারেন সেটা আদালত দেখবে। আজকেও পত্রিকায় দেখলাম ইসকন বলেছে, যে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের সঙ্গে ইসকনের কোনো সম্পর্ক নেই।”
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা সত্যিকার অর্থে সম্প্রীতিটা স্থাপন করে দেব। এ জন্য আমাদের নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি, দাবি-দাওয়া নিয়ে সব সময় আলোচনা করব। প্রতিটি অপরাধের বিচার হবে। অপরাধের বিচারের সঙ্গে সম্প্রীতিটা মিলিয়ে পেলে চলবে না। সম্প্রীতির বন্ধব যাতে আরও দৃঢ় হয় সে জন্য সরকার কাজ করবে।”
সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান মাহফুজ আলম। তবে অভিযোগের বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেননি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “মানুষ তাদের প্রতি আস্থার জায়গা খুঁজে পেয়েছে। ছোট ছোট বিরোধ নিয়ে এমন কিছু করা উচিত না যেটা আমাদের জাতীয় স্বার্থকে সম্মুনত রাখার জন্য আমরা যে লড়াইয়ে সামিল হয়েছি, সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। শিক্ষার্থীদের প্রতি জাতি যে আস্থা ও ভরসা রেখেছে তা যেন অক্ষুন্ন থাকে, যেন আরও বাড়ে ও সুদৃঢ় হয়। সে জন্য যেকোন বিরোধ, সমস্যার সমাধান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীসহ সকলেই করেন।”
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও রাজধানীতে একাধিকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের গাড়ি একাধিকবার ট্রাকের ধাক্কা দেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সমন্বয়কদের উপর হামলার বিষয়টিকে হালকা ভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। সমন্বয়কেরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাতিকে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস চালাচ্ছেন, তাদের বিবেককে যেভাবে জাগ্রত করছেন, এটা নিশ্চয়ই অনেকের সারতে লাগবে। তাদের নিরাপত্তা বিষয়টি কেবিনেটে আলোচনা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “তাদের যে নিরাপত্তার প্রয়োজন, এটা আলোচিত হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এটার বিষয়ে সরকারের সংস্থাগুলো তদন্ত করছে।”
সারাদেশের আদালতের নিরাপত্তার বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, “সকলকে সংযত থাকতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে। হয়তো আপনার দাবি যুক্তি কিন্তু আপনার দাবি আদায়ের পদ্ধতি যদি বেআইনি, ধ্বংসাত্মক হয়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে আপনার ন্যায দাবিও পূর্ণ করতে পারবেন না। আজকে প্রধান বিচারপতিও উদ্বেগ জানিয়েছেন। আমরা সকলকে বলব, এই জাতীয় ধ্বংসাত্মক ও অবমাননা মুলক বিরত থাকুন। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে অভিযোগ দায়ের করার প্লাটফর্মে আছে, অভিযোগ দায়ের করা হবে। সংবাদ সম্মেলন করা হবে কিন্তু ধংসাত্মক প্রক্রিয়া বেছে নিলে কারও কোন লাভ হবে না।”
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থানা স্থাপন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জরুরি মনে করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবির প্রেক্ষিতে আমরা দুই সপ্তাহের সময় নিয়েছি। দুই সপ্তাহ আমরা বসে দেখব, এই থানাটা এখানে করার উপযোগী কিনা। তাছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে যে মিটিংগুলো করেছে সেই ব্যাপারে কেবিনেটকে অবহিত করা হয়েছে এবং সেখানে যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাংলাদেশের জন্য বেশ ইতিবাচক বলে অ্যাভাইজিং কমিটিকে জানানো হয়েছে।”