নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রতা ও বর্বর গণহত্যার চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন। তারা সব অন্যায়, অপকর্ম ও বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তাদের কণ্ঠরোধ ও জাতিকে মেধাশূন্য করতেই পরিকল্পিতভাবে দেশের এই সেরা সন্তানদের হত্যা করা হয়। দেশের স্বাধীনতাবিরোধীরা এই গণহত্যায় সহযোগিতা করেছিল। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এখনো সক্রিয় রয়েছে। পেছনের রাস্তা দিয়ে অগণতান্ত্রিক পন্থায় তারা ক্ষমতায় আসতে চায়। এদের প্রতিহত করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধীদের সম্পর্কে সর্বদা সজাগ থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা। বৃহস্পতিবার রাতে শহরের টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আলোচনা সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার।
এসময় তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যখন দেশকে স্বাধীন করার দ্বারপ্রান্তে ঠিক তার আগ মুহূর্তে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাদের এজেন্টদের সহযোগিতায় বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশা তৈরি করে। তার অংশ হিসেবে প্রায় ১ হাজার ৫০০ দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা পাওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং মেধাশূন্য একটি দেশ যেখানে বিধ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভঙ্গুর প্রায় অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ঘাতকরা জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও যাদুকরী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোরের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহসান হাবীব বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সে যুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। কেউ সরাসরি যুদ্ধে অংশগহণ করেছে, কেউ বা ঘরে আশ্রয় দিয়ে আবার কেউ বা তথ্য কিংবা খাবার দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছিল। এদের মধ্যে আর একটা শ্রেণি ছিল যারা দেশে বসবাস করে পাকিস্তানীদের এজেন্ট হিসেবে মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। সেদিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, গবেষক এমনকি প্রগতিশীল লোককেও তার হত্যা করে। বাংলাদেশ এখন একটি বিস্ময়ের নাম। এখন পাকিস্তানীরা তাদের সরকারের কাছে দাবি করে পাকিস্তানকে যেন বাংলাদেশের অর্থনীতির মতন শক্তিশালী করে। একই সাথে নতুন প্রজন্মকে দেশ বিরোধী অপশক্তির অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সর্তক থাকার অনুরোধ জানান তিনি। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম সিদ্দিকী, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. আছাদুজ্জামান, যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার, মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর উপ প্রধান অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, প্রবীণ শিক্ষাবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান, দৈনিক কল্যাণের প্রকাশক ও সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা, জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি হারুন অর রশিদ। এর আগে বিকাল থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।