নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোরে বোমার মজুদ গড়ছে সন্ত্রাসীরা। গত পাঁচ দিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ৪৬টি বোমা ও ৫ কেজি বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করেছে। এসময় দু’জনকে আটক করা হয়। নির্বাচন ঘিরে নাশকতা বা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ও বোমার মজুদ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার মধ্যরাতে যশোর শহর ও বেনাপোল এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ৩০টি ককটেল ও একটি পিস্তল সদৃশ এয়ারগান উদ্ধার করেছে র্যাব। এরমধ্যে বেনাপোল পোর্ট থানার ভবেরবেড় গ্রামের একটি পুকুরের পাশের ঝোপের মধ্য থেকে বালতিভর্তি ২১টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। তবে এর সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি তারা।
এ ছাড়া গত ১৮ নভেম্বর বেনাপোল পোর্ট থানার বালুন্ডা গ্রামের একটি পুকুরের পাশ থেকে ১৬টি ককটেল পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বেনাপোল পোর্ট থানার পুলিশ। ওই দিন ঝিকরগাছার লাউজানি রেলক্রসিংয়ের সামনে থেকে মোটরসাইকেল আরোহী দু’জনকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৫ কেজি বোমা তৈরির উপকরণ।
একই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের ঘোপে বিএনপির প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের বাসভবনে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের দাবি, তাদের ও পাশের চাচার বাড়িতে অন্তত ১৫টি হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়। ৩-৪টি মোটরসাইকেলে এসে সন্ত্রাসীরা এই হামলা করে। বোমার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এলাকা। এখনও পুলিশ বোমা হামলাকারীদের আটক করতে পারেনি। তাদেরকে আটক করলে পুলিশ আরও বোমা ও অস্ত্র উদ্ধার করতে পারত বলে নাগরিকদের ধারণা।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ করে যশোরে বোমা উদ্ধার বেড়েছে। নির্বাচন আসলে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ও বোমার মজুদ গড়ে তোলে। এরাই টাকার বিনিময়ে জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি করে থাকে। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের কদর বাড়ে নির্বাচনকালে। হঠাৎ করে অস্ত্র-বোমার মজুদের খবরে আতংকিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
যশোরের বিভিন্ন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সাথে যুক্ত জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, দাগী সন্ত্রাসীদের নির্বাচন আসলে কদর বাড়ে। তাদেরকে টাকা দেয়া হয় অস্ত্র-বোমা তৈরির উপকরণ কেনার জন্য। এরা সব সময় ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকে। পুলিশ চাইলে এদেরকে চিহ্নিত করে আটক করতে পারে। তাহলে আর সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধ হবেনা।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইনকে ফোন করা হলে তিনি সংযোগ কেটে দেন। ডিবি পুলিশের পরিদর্শক রুপন কুমার জানান, কিছু সন্ত্রাসী বোমার মজুদ গড়ছে তবে নির্বাচন কেন্দ্রিক বলে আমাদের মনে হয়না। তারপরও সন্ত্রাসীদের আটকে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সৃষ্টির লক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। গত ৫ দিনের ব্যবধানে আমরা ৪৬টি বোমা উদ্ধার করেছি। আরও খবর রয়েছে- সন্ত্রাসীরা বোমার মজুদ করছে। সেগুলোও উদ্ধার করা হবে। এর সাথে জড়িতদের আটকে আমরা কাজ করছি। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ যাতে অস্ত্রের মজুদ গড়তে না পারে সেজন্য র্যাব সদস্যরা সজাগ দৃষ্টি রাখছে।