নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশের ন্যায় যশোরেও আলো নিভিয়ে অর্ধশতক বছর আগে বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর নিধনযজ্ঞের বিভীষিকার স্মৃতি স্মরণ করা হলো। শুক্রবার রাত ৯টা বাজতেই এক মিনিটের জন্য নামল অন্ধকার; একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিটের এই ‘ব্ল্যাক-আউট’ কর্মসূচি ছিল। একই সাথে আলোক মিছিল নিয়ে বন্ধভূমিতে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় যশোর জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে রওশন আলী মঞ্চ থেকে একটি আলোক মিছিল স্বাধীনতা মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
পরে শুরু হয় জাতীয় গণহত্যা দিবসের আলোচনা সভা। সেখানে বক্তারা বলেন, ২৫ মার্চ ছিল বাঙালির ইতিহাসের কালরাত। এটি মানব সভ্যতার ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। এই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’র নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর চালায় ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পোড়া মাটি নীতি বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। তারা বলেছিল মানুষ নয়. আমরা চাই মাটি। তারই ধারাবাহিকতায় ২৫ মার্চ ঘুমন্ত বাঙালির ওপর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল। তবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেয়ায় পাকিস্তানের সামরিক জান্তার সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। বীর বাঙালি সশস্ত্র যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছে লাল-সবুজের বাংলাদেশ।
জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন যশোর পৌর মেয়র হায়দার গনী খান পলাশ, দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক ও সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারাজী সাঈদ আহমেদ বুলবুল।
বক্তারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য-পুস্তকে গণহত্যার বিভীষিকাময় ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে। তাদের আত্মার মাগফেরাত ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে লাল-সবুজের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এর আগে বিকেল থেকে রওশন আলী মঞ্চে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় দেশত্মবোধক গান ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক।
অন্যদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আইনজীবী সমিতির মিলনায়তন থেকে হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আলোক মিছিল নিয়ে বধ্যভূমিতে যায়। এ সময় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।