ফিচার ডেস্ক
জামাকাপড় ধোওয়া আমাদের অনেকের কাছেই বেশ ঝক্কির ব্যাপার মনে হয়; সময়ের অভাবে কিংবা অলসতার কারণেও প্রতিদিন কাপড় ধুতে পছন্দ করেন না অনেকে। আবার এর বিপরীতে অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন কাপড় ধুয়ে পরতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। বিভিন্ন দেশে ঋতুভেদে জামাকাপড় ব্যবহার ও ধোয়ার সময়-প্রক্রিয়াও ভিন্ন ভিন্ন হয়। কিন্তু বড় প্রশ্ন হচ্ছে, একটি পোশাক আপনি কতদিন পর্যন্ত না ধুয়েই ব্যবহার করতে পারেন?
দেখা গেছে, বেশিরভাগ সময়ই এটি পেশাদার কারো পরামর্শে নয়; বরং ব্যক্তির নিজস্ব অভিরুচি-মনোভাব কিংবা রীতিনীতির ওপর নির্ভর করে। আবার একেকটি দেশের উষ্ণ বা শীতল আবহাওয়াও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। যেমন- শীতপ্রধান দেশে ভারি উলের কিংবা ফ্লানেলের পোশাক ব্যবহার করতে হয় যা বারবার ধোয়া এবং শুকানো সম্ভব নয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশে বছরের অধিকাংশ সময় গরম আবহাওয়াই বেশি অনুভূত হয়, তাই সে অনুযায়ী পোশাক ব্যবহার ও তার যত্ন নিতে হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে জনৈক টিকটক ব্যবহারকারী অ্যালিসন অনলাইনে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন একথা জানিয়ে যে তিনি একই পাজামা একাধিকবার ব্যবহার করেন। বাংলাদেশের অনেকের কাছেই হয়তো তা স্বাভাবিক মনে হবে, কারণ এদেশে অনেকেই জিন্স বা ডেনিমের পোশাক একটানা অনেকদিন না ধুয়ে ব্যবহার করেন।
অ্যালিসনের ভাষ্যে, “যখন আমি ছোট ছিলাম, আমার মা-বাবা আমাকে পাজামা পরতে দিত… একটানা কয়েক রাতে একই পায়জামা পরতাম, কারণ সেটা ময়লা হতো না। এখন বড় হয়েও আমি তাই করি। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা খুবই ময়লা পোশাক ব্যবহার করছি কিনা যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।”
পায়জামার মতো আরও অনেক পোশাক আছে যা আসলে ব্যক্তিগত ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে… যেমন- ঘামের পরিমাণ, লাইফস্টাইল ইত্যাদি।
নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারের অ্যাসিসট্যান্ট অ্যাটেন্ডিং ডার্মাটোলজিস্ট ডা. অ্যান্থনি রসির ভাষ্যে, “পোশাকের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে আমাদের মনোভাব অনেকটাই ‘সামাজিক ও সাংস্কৃতিক’। অনেকের মধ্যেই ‘অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে চলা বা ‘ওভার ওয়াশ’ করার বাতিক আছে।”
একই পোশাক একটানা বারবার পরার একটি কারণ হতে পারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জটিলতা এড়ানো। তাই সময় বাঁচানো ও ঝামেলা এড়াতেও প্রতিদিন একই পোশাক পরেই বেরিয়ে যান অনেকে”, বললেন লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল মাইক্রোবায়োলজির সিনিয়র প্রভাষক মানাল মোহাম্মদ।
আরও পড়ুন: নিজের ব্যবসা শুরু করার আগে যে ছয়টি বাস্তবতা বিবেচনায় রাখতে হবে
কিন্তু আপনার ব্যবহৃত কাপড় ঠিক কখন ধুতে হবে, তা না জানা থাকলে তা দুই দিক থেকেই বিপদ হতে পারে। বহুদিন পরপর কাপড় ধুলে তা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে, এমনকি ইনফেকশনও হতে পারে। আর প্রায়ই কাপড় ধুতে থাকলে তা আপনার কাপড়ের ক্ষতি করতে পারে এবং লন্ড্রির পেছনে অপ্রয়োজনীয় খরচের কারণ হতে পারে। তাই এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য রাখাটা জরুরি।
যেসব কাপড় ধোয়া অত্যাবশ্যক
একই পোশাক কতদিন পরা যাবে বা একটানা কতদিন পরা যাবে, তার কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম না থাকলেও, বিশেষজ্ঞরা বলেন- কয়েক ধরনের পোশাক আছে যা প্রতিবার ব্যবহারের পরেই ধুয়ে দেওয়া উত্তম। যেমন: অন্তর্বাস, মোজা, টাইটস, লেগিংস, স্পোর্টসওয়্যার ইত্যাদি। আরও যেসব কাপড় সরাসরি ঘাম বা অন্য কোনো দাগ লেগে থাকে বা বাজে গন্ধ থাকে, সেগুলোও প্রতিদিন ধুয়ে ফেলা উচিত বলে মনে করেন প্রভাষক মোহাম্মদ।
এদিকে ডা. অ্যান্থনি রসি বলেন, “এ ধরনের পোশাক আমাদের শরীরের এমন সব অংশে ব্যবহৃত হয়, যেখানে প্রচুর প্রাকৃতিক ব্যাক্টেরিয়া থাকে। দৈনন্দিন কাজের সময় আমাদের দেহ থেকে ঘাম বের হয় এবং একটি অবস্থা তৈরি করে, যেখানে এসব ব্যাক্টেরিয়ার জন্মানোর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আর ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে ত্বকে ইনফেকশন, ফাঙ্গাস বা অন্যান্য চর্মরোগের সমস্যা দেখা দেয়।
ঘাম থেকে উৎপন্ন ব্যাক্টেরিয়া ছাড়াও, জিমে বা খেলাধুলার সময় পরিহিত পোশাকগুলো ‘স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরেয়াস’ এর মতো ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে আসতে পারে এবং আমাদের অতি পরিচিত কিছু চর্মরোগের জন্ম দেয়। কিন্তু এগুলো যদি শরীরের অভ্যন্তরীণ টিস্যু বা রক্তপ্রবাহের মধ্যে প্রবেশ করে, তাহলে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
অনেকেই ওয়ার্কআউটের পর পোশাক শুধু বাতাসে বা ড্রায়ার শুকিয়ে নেন যাতে পরেরদিন আবার পরতে পারেন। কিন্তু এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করেন ডা. রসি। তিনি বলেন, “এই তাপের মাধ্যমে ব্যাক্টেরিয়া জন্মাতে সাহায্য করা হয়! কারণ ড্রায়ারের গরম তো ব্যাক্টেরিয়া মেরে ফেলতে পারে না। কিন্তু যদি সাধারণ তাপমাত্রার পানি ও গরম পানি মিলিয়ে সাবান দিয়ে ধোয়া হয়, তাহলে ময়লাগুলো আলগা হয়ে যায় এবং ব্যাক্টেরিয়া দূর হয়ে যায়।”
মোজা কেন না ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করা উচিত না, সে সম্পর্কে মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের ডার্মাটোলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল ইনস্ট্রাকটর ডা. জেরেমি ফেন্টন বলেন, “পায়ের তলায় এবং আঙ্গুলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আমাদের জুতার ভেতরেই ফাঙ্গাস জন্মানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকে। কারণ জুতার ভেতরটা থাকে উষ্ণ, স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার।” আর সে কারণেই মাসে একবার অন্তত জুতার ভেতরের সোল ওয়াশিং মেশিনে বা হাতেই পরিষ্কার করা উচিত।
বারবার ব্যবহার করা যায় যেসব পোশাক
পায়জামা, আউটওয়্যার, জিন্স এবং আরও কিছু পোশাক না ধুয়েই বেশ কয়েকবার ব্যবহার করা যায়; তবে এখানেও কিছু নিয়ম আছে।
আরও পড়ুন: মন্দার সময় পদোন্নতি পাওয়ার পাঁচ টিপস
ডা. রসি বলেন, “প্যান্ট ও শার্টের ক্ষেত্রেও পুরোটাই নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাপার; আর দেখতে হবে যে আপনি সারাদিনে কী পরিমাণ ঘামছেন। অনেকেই শার্টের নিচে স্যান্ডো গেঞ্জির মতো কিছু পরেন। সেক্ষেত্রে ভেতরের অন্তর্বাস প্রতিদিনই ধুয়ে দিতে হবে, কিন্তু ওপরের শার্ট না ধুলেও চলবে। কিন্তু অন্তর্বাস না পরলে পুনরায় ব্যবহারের আগে সেই পোশাক ধুয়ে দিতে হবে, যেহেতু এটি সরাসরি ত্বকের স্পর্শকাতর অংশের সংস্পর্শে এসেছে।”
বাংলাদেশে যেহেতু বছরের বেশিরভাগ সময়ই উষ্ণ আবহাওয়া থাকে, তাই অন্তর্বাস এবং অন্যান্য পোশাকেও ঘামের গন্ধ-দাগ লেগে যাওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক বেশিই থাকে। সেক্ষেত্রে কাপড় ধোওয়ার সঠিন নিয়ম মেনে সেগুলো ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে। বারবার অতিরিক্ত সাবান দেওয়া বা ঘষাঘষি করে কাপড় ধুলে তা সহজেই ছিঁড়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
আবার যদি ঘুমানোর আগে গোসল করেন বা পোশাকের নিচে অন্তর্বাস পরেন, তারা একই পায়জামা বা স্লিপিং ড্রেস না ধুয়েই টানা এক সপ্তাহ ব্যবহার করতে পারেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কোট বা জ্যাকেটের মতো পোশাকের ক্ষেত্রে মাসে একবারের বেশি ধোওয়ার প্রয়োজন পরে না। কারণ এগুলো সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসে না, অন্য কোনো জামার ওপর পরা হয়। রসি বলেন, “আর যদি এগুলো প্রতিদিন পরিধান করেন, তাহলে দুই সপ্তাহ পরপর ধুতে পারেন।”
জিন্স ব্যবহার ও ধোওয়া
জিন্সের প্যান্ট, ডেনিমের পোশাক কতদিন পর পর ধোওয়া যায় তা বরাবরই আলোচনার অন্যতম বিষয় হয়ে থাকে। অন্যান্য কাপড়ের চেয়ে জিন্সের স্থায়ীত্ব বেশি হওয়ায়, সবাই এটিকে সহজে ব্যবহারযোগ্য ভাবেন। জিন্সে যদি দাগ না লাগে বা ঘামে ভিজে ময়লা না হয়ে যায়, তাহলে এটিও প্রায়ই ধোওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রভাষক মানাল মোহাম্মদ অবশ্য মাসে একবার জিন্স ধোওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যদিও তা সম্পূর্ণ ব্যক্তির লাইফস্টাইলের ওপর নির্ভর করে।
পরিশেষে, কোনো কাপড় ধোওয়া দরকার কিনা তা বুঝতে চাইলে আগে নিজেকে যে প্রশ্নগুলো করবেন তা হলো- কাপড়ে কি বাজে গন্ধ আছে? আমার কি একজিমা (চর্মরোগ), ত্বকে র্যা শ (ফুসকুড়ি) হওয়া বা ক্ষত হওয়ার মতো সমস্যাগুলো আছে? (কারো কারো এলার্জির সমস্যা থাকে প্রকট), কাপড়ের ময়লা কি খুব বোঝা যাচ্ছে? কাপড়ে কি ঘামের গন্ধ লেগে আছে? এই পোশাকের নিচে কি আমি অন্তর্বাস পরেছিলাম?
মূল কথা হলো, একেকজন মানুষ এসব প্রশ্নের একেক রকম উত্তর দেবে। তাই কাপড় ধোওয়ার সিদ্ধান্তও সে অনুযায়ীই নিতে হবে।
আরও পড়ুন: ওয়াইফাই রাউটার দিয়েই চোখ রাখা যাবে দেয়ালের অপর পাশে থাকা ব্যক্তির গতিবিধির!
সূত্র: সিএনএন
১ Comment
local women dates online free dating personals for singles local women dates single website