রমজান আলী, জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কৃষিখাতে দেখা দিচ্ছে শ্রমিক সংকট, সেই সাথে বাড়ছে শ্রমিকের মূল্য। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বোরো ধান রোপণ ও মাড়াই মওসুমে চরম ভাবে শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকের মূল্য বেড়েই চলেছে। এ কারণে শ্রমিকের বিকল্প হিসাবে কৃষকদের মাঝে যান্ত্রিক উপায়ে (রাইস ট্রান্সপ্লান্টার) ধান রোপণ ও মাড়াইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এতে প্রায় ৬০-৬৫ ভাগ শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হয়ে থাকে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দাবি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, ধান রোপণযন্ত্রের মাধ্যমে বোরো ধানের চারা রোপণ করলে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় সবোর্চ্চ শতকরা ৬০ ভাগ পর্যন্ত সাশ্রয় হতে পারে। এছাড়া রোপন যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপনে আরো কিছু সুবিধা রয়েছে।
সম্প্রতি জীবননগর উপজেলায় প্রতাপপুর আইপিএম ক্লাবে সরকারি ভাবে একটি ধান রোপণ যন্ত্র (রাইস ট্রান্সপ্লান্টার) প্রদান করা হয়েছে। যন্ত্রটি প্রথমে ক্লাবের সদস্য কৃষকদের জমিতে ধান রোপণ এ বছর পরীক্ষামুলক ভাবে শুরু করা হয়েছে। তবে যন্ত্রটির কারণে জমিতে সময়,অর্থ ও শ্রমিক কম ব্যবহার হওয়ায় এলাকার কৃষকদের মধ্যে যন্ত্র দিয়ে ধান রোপণের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
জীবননগর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন,আমাদের উপজেলায় এখনও ব্যাপক ভাবে কৃষিখাতে যান্ত্রিককরণ হয়নি। উপজেলায় এ পর্যন্ত একটি ধান রোপণ যন্ত্রের হিসাব পাওয়া গেছে। এ যন্ত্রের প্রতি শুরুতেই কৃষকদের তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা না গেলেও বর্তমানে কৃষিখাতে যান্ত্রিকরণে আগ্রহ বাড়ছে। আগামী মওসুমে উপজেলায় ধান রোপণ ও মাড়াইয়ে যন্ত্রের চাহিদা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উপজেলার প্রতাপপুর আইপিএম ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ চাষি রমজান বলেন, আমাদের এখানে একটি কৃষি যন্ত্র সেবা রয়েছে। ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধান রোপনের অনেক সুবিধা রয়েছে। এতে একজন শ্রমিক আট ঘন্টায় দুই হেক্টর জমিতে অনায়সে চারা রোপণ করতে পারেন। কিন্তু দুই হেক্টর জমিতে আট ঘন্টা সময়ের ব্যবধানে চারা রোপণের জন্য ৮০ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। এ প্রক্রিয়ায় বীজও কম লাগে। এক বিঘা জমিতে ৫ কেজি বীজই যথেষ্ট। অন্যদিকে এক বিঘা জমিতে চারা রোপণের জন্য যন্ত্রটি চালাতে মাত্র ১০০ টাকার জ্বালানি তেল খরচ হবে। স্বল্প সময়ে চারা রোপন, রোপণের সময় সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ করা যায়,লাইন আকারে চারা রোপণ সুবিধাজনক,অল্প বয়সের চারা রোপন সুবিধা। এ ছাড়াও এ পদ্ধতিতে স্বাভাবিকের চেয়ে উৎপাদনও বেশী এবং রোগ-বালাইও কম হবে। তবে রোপন যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ করতে বিশেষ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করতে হয়। এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরিও খুব সহজ।
উপজেলা প্রতাপপুর গ্রামের কৃষক আলম হোসেন ও জমসেদ আলী বলেন,প্রথমদিকে যান্ত্রিককরনের মাধ্যমে ধান চাষের ব্যাপারটি আমাদের মধ্যে হাস্যকর মনে হলেও বর্তমানে আমরা নিজেদের জমিতে মেশিন দিয়ে ধান রোপণ করেছি। যন্ত্রের মাধ্যমে ধান রোপনে সময় ও খরচ দুই-ই অনেক কম। অন্যদিকে এ পদ্ধতে চাষে রোগ বালাই কম হওয়ায় উৎপাদনও বেশি। এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে কৃষকের সর্বোচ্চ ৬০ ভাগ পর্যন্ত উৎপাদন ব্যয় কম হবে। এ বছর আমাদের এলাকায় যান্ত্রিক উপায়ে ধান রোপণ পরিক্ষামুলক হলেও আগামী বছর এলাকার অধিকাংশ কৃষক যান্ত্রিক উপায়ে ধান রোপণ করবে বলো শোনা যাচ্ছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসার সারমিন আক্তার বলেন,ধান রোপন যন্ত্রের দাম সর্ব নিন্ম দেড় লাখ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। সরকার চীন ও জাপান থেকে এ সব যন্ত্র আমদানি করে থাকেন। সরকার প্রায় অর্ধেক ভর্তুকিতে কৃষকদেরকে কৃষি যন্ত্র প্রদান করছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের’ আওতায় কৃষি যন্ত্রের জন্য ভর্তুকি দিচ্ছেন। কৃষিখাতে যন্ত্র ব্যবহারে একদিকে উৎপাদন বাড়বে,অন্যদিকে আর্থিক ভাবেও সাশ্রয়ী হবেন কৃষকেরা।