ঢাকা অফিস
জীবননাশের আশঙ্কায় আত্মগোপনে চলে গেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতা এবং এমপি-মন্ত্রীরা। গোপনে দেশ ছেড়েছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার দেশ ত্যাগের চেষ্টাও করছেন। দলের সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। এদিকে সারাদেশে দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন বিরোধীরা। হামলা-মামলার ভয়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।
সর্বশেষ রোববার (৪ আগস্ট) পর্যন্ত ঢাকা সহ সারাদেশেই মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকমীরা। দেশে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টাও করেছিলেন তারা। এসময় অনেকে জড়িয়ে পড়েন সংঘর্ষে। বহু হতাহতের ঘটনাও ঘটে। সোমবার (৫ আগস্ট) সকাল থেকে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ক্ষমতা থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দিনে সকাল থেকে দলটির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। শুধু তাই নয়, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলার কার্যালয় ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও দলের কাউকে তা প্রতিরোধ করতে দেখা যায়নি।
সর্বশেষ মঙ্গলবার সকাল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কিছু মানুষ আগুনে পুড়ে যাওয়া কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জিনিস-পত্র নিয়ে যাচ্ছে। উৎসুক জনতার অনেকেই এই সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সমনে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সেখানে দেখা যায়নি।
এদিকে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। সেই কার্যালয় থেকেও কিছু মানুষকে পুড়ে যাওয়া মালপত্র নিয়ে গেছে। কার্যালয়ের ভিতরে রিকশা নিয়ে গিয়ে এসব মালপত্র নিতে দেখা গেছে অনেককে। তবে কার্যালয়ের কোনো স্টাফ বা দলটির কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এই সময় সেখানে দেখা যায়নি।
সূত্র বলছে, পরিস্থিতি বুঝতে পেরে রোববার রাত থেকে গোপনে দেশ ছাড়তে থাকেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা এবং দলীয় এমপি-মন্ত্রীরা। জীবননাশের আশঙ্কায় নিরাপদ স্থানে চলে যান তারা। যারা দেশে অবস্থান করছেন তারাও চলে যান আত্মগোপনে। কেউ কেউ গোপনে দেশ ত্যাগের চেষ্টাও করছেন। সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নিজেদের লুকিয়ে রেখেছেন।
মঙ্গলবার ভারতের দিল্লিতে যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সদ্য বিদায়ী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে আটক করা।
সদ্য বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। পরে তিনি প্রতিবেশী ভারত সীমান্তের একটি স্থলবন্দর দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন।
রোববার রাতেই সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশ ত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি সদ্য সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপি-মন্ত্রীদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। কোনোভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এদের অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দেশ ত্যাগ করেছেন।
দলীয় প্রধান, দলের শীর্ষ নেতা এবং এমপি-মন্ত্রীদের দেশ ছাড়া ও আত্মগোপনের বিষয়টি ভালো ভাবে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, যারা দলের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন, সবাই কর্মীদের বিপদের মুখে রেখে দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ কর্মীরা এখন হামলার শিকার হচ্ছে। তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মারপিট করা হচ্ছে। অনেকে হামলা-মামলার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা জানেন না এমন অবস্থায় কী করতে হবে। একই সাথে এই সংকটে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা।