জাহিদ হাসান
যশোরে এ বছর ৫৯০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হলেও উৎপাদন নেই। যশোরের স্থানীয় কৃষকদের ক্ষেতের মরিচ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দাম বাড়ে হু হু করে। কৃষকরা বলছে, তীব্র তাপমাত্রার কারণে গাছে ফলন আসেনি। যে কারণে কাঁচা মরিচে ঝাঁঝ বাড়ে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন গুণ। এদিকে গতকাল রোববার ৫ ট্রাকে করে প্রায় ৩৪ মেট্রিক টন ভারতীয় কাঁচা মরিচ বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। আজ বা আগামীকাল ভারতের ঝাল বাজারে এলে দাম কমে যাবে।
যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বৃহৎ সবজির হাট যশোরের সাতমাইল বারীনগর। এসব হাট থেকে ব্যাপারীরা পাইকারি দামে সবজি কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করেন। যশোর শহরের বড় বাজার, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, বেজপাড়া তালতলা বাজার, রেল বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের বেশির ভাগ সবজি আসে এ হাট থেকে। বারীনগরের এই হাটে সব ধরণের গ্রীষ্মকালীন সবজি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও কাঁচা মরিচ স্বাভাবিক নেই। স্থানীয় কৃষকদের ক্ষেতে মরিচ উৎপাদন না হওয়াতে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। গেল দুই সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বৃহৎ সবজির এই বাজারে মরিচ সরবরাহ কমেছে কয়েক গুণ।
হাটের ইজারাদার আব্দুস সুবহান বলেন, মাস দুয়েক আগে বাজারে ৫ শ থেকে ৬ শ কেজি মরিচ উঠতো। এখন সেই মরিচ উঠে ২০-২৫ কেজিতে। তীব্র তাপদাহে গাছে মরিচ ধরেনি। মরিচ ছাড়া বাজারে সবধরণের সবজি সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এক সময় যশোরের মরিচ সারাদেশে সরবরাহ করা হতো। আর এখন ফরিদপুরের মধুখালী এলাকার মরিচ দিয়ে যশোরে বাজারের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মনজুরুল আলম বলেন, এ বছর যশোর জেলায় ৫৯০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। গত বছর ছিলো ৫৭০ হেক্টর। সে তুলনায় এ বছর ২০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। কিন্তু তীব্র খরার কারণে ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে উৎপাদন এমনিতেই কম হয়। তার উপর খরা। দুই মিলে উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আশা করছি, মাস খানেক সময়ের মধ্যে উৎপাদন স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বড়হৈবতপুর গ্রামের চাষি আলাউদ্দিন মন্ডল বলেন, সম্প্রতি যশোরে দীর্ঘ সময় ধরে রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রা বিরাজ করেছে। এতে তীব্র খরার সৃষ্টি হয়। খরায় পুড়ে কৃষকের মরিচের ক্ষেত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই ক্ষতির প্রভাব পড়েছে। কৃষকের ক্ষেতে এখন মরিচ নেই। দুই এক মাস পর থেকে মরিচের ফলন পাওয়া যাবে। সদর উপজেলার তীরেরহাট গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ১০ শতক জমিতে এ বছর মরিচের আবাদ করেছি। এখন ক্ষেতের গাছে মরিচ নেই। অল্প যা হচ্ছে তা দিয়ে নিজেদের খাওয়াটা চলছে। রহমতপুর গ্রামের আইনাল মন্ডল বলেন, নয় শতক জমিতে চাষ করেছি। মাঝে তীব্র খরায় ক্ষেত পুড়ে নষ্ট হয়েছে। পরিচর্যা করে আবার ঠিক করা হয়েছে। আরো কিছুদিন পরে ফলন পাওয়া যাবে।
রোববার যশোর শহরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচের কেজি মানভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। তবে আড়তে পাইকারি প্রতি কেজি মরিচ ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা দরে বেচাকেনা হয়েছে। বড় বাজারের সবজির আড়ত মা ভান্ডারের প্রতিনিধি বিধান সাহা বলেন, যশোরের স্থানীয় কৃষকদের মরিচ বাজারে নেই। ফরিদপুরের মধুখালীর মরিচ যশোরে আসছে। আজ ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। এলসি মাধ্যমে আমদানি করা মরিচ বাজারে ঢুকলে দাম অর্ধেকে নেমে যাবে। সেটা করা এখন খুব জরুরি।
ঈদের কয়েক দিন আগেই থেকে মরিচের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে দাম। রেকর্ড দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। বলছেন, তদারকিবিহীন বাজারে আধিপত্য বাড়ছে, সিন্ডিকেটের।
শওকত হোসেন নামে এক কলেজ শিক্ষক বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতায় যখন নাভিশ্বাস ভোক্তার, তখনই আগুন কাঁচা মরিচের বাজার। মাসখানেক আগেও মাত্র ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া মরিচ এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। হঠাৎ এমন দামবৃদ্ধিতে নাজেহাল অবস্থা ভোক্তাদের। কাঁচা মরিচের ঊর্ধ্বমুখী দামে বাজারে টিকে থাকাই দায়।
শহিদুজ্জামান নামে এক চাকরিজীবী বলেন, কাঁচা মরিচের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজারে মরিচ কিনতে এসে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বেশি কেনাও সম্ভব না; আবার পরিমাণে অল্পও বিক্রি করতে চাইছেন না দোকানিরা। বেশ কিছুদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী কাঁচা মরিচের দাম। অন্যান্য সবজি না হলেও চলে; তবে মরিচ ছাড়া তরকারি স্বাদ হয় না। তাই বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে মরিচ কিনতে হচ্ছে।
এদিকে গতকাল বিকালে (২ জুলাই) বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় আমদানি করা কাঁচা মরিচ এসছে। এদিন ৫ ট্রাকে করে প্রায় ৩৪ মেট্রিক টন ভারতীয় কাঁচা মরিচ বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স উষা ট্রডিংয়ের সত্ত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, দেশে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভারত থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৫ জুন আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে (খামারবাড়ী) কাঁচা মরিচ আমদানির জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করি। এরপর আমাদের আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।
এদিকে বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারি কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার বলেন, দেশের বাজারে ঈদের আগে থেকে হঠাৎ করে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভারত থেকে আমদানির অনুমতি দেওয়ায় আজ থেকে আমদানি শুরু হয়েছে।
