নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিকরগাছা
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেনউদ্দীন হোসেনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ মে) বেলা ২টার দিকে যশোরের ঝিকরগাছা বিএম হাই স্কুল মাঠে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র পাল তার মরদেহে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি চৌকশ দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পরে জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত পরিষদ ঝিকরগাছার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করা হয়। এরপর জানাজা নামাজ শেষে তার বসতবাড়ির পাশে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
বরেণ্য এই প্রাবন্ধিকের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির ও মেজর জেনারেল (অব.) ডাক্তার নাসির উদ্দীন, পৌরমেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। জানাজার পূর্বে তার বড় ছেলে কাজল রায়হান উপস্থিত মানুষের কাছে পিতার মাগফেরাতের জন্য দোয়া চান।
এর আগে গত সোমবার বিকেল ৫টার দিকে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হোসেনউদ্দীন হোসেন। গত বৃহস্পতিবার তাকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ভেন্টিলেশন সার্পোট দেওয়ার পর মারা যান এই কথা সাহিত্যিক।
হোসেনউদ্দীন হোসেন ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। প্রবন্ধ ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি তাকে এ পুরষ্কারে নির্বাচিত করে। তিনি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে ১৯৪১ সালে ধনাঢ্য এক কৃষি পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। পিতা কলিম উদ্দীন মা আছিরন নেছা। ৪ বোনের তিনি একা ভাই। শৈশবকাল থেকেই তিনি সাহিত্য চর্চা শুরু করেন।
১৯৫৫ সালে কোলকাতা থেকে প্রকাশিত লোকসেবক পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা ছাপা হয়। সেই থেকে শুরু। অদ্যবদি তার ৩০টি বই বের হয়েছে। এরমধ্যে কবিতার বই ২টি, গল্পের বই ২টি, ছোট গল্পের বই ২টি, উপন্যাসের বই ৬টি, ইতিহাসের বই ৪টি, বিদেশি সাহিত্যের বই ৩টি, জীবন ভিত্তিক বই ১টি, প্রবন্ধের ৫টি বই উল্লেখযোগ্য। তিনি সম্পাদনাও করেছেন ৩টি বইয়ের।
মাইস এন্ড ম্যান। এই বইটি ভারতের কোলকাতার রবীন্দ্র ভারতি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়ানো হয়। বইটি বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করা। বইটির বাংলা হলো ইঁদুর ও মানুষেরা। বইটির লেখক বরেণ্য সাহিত্যিক হোসেনউদ্দীন হোসেন। ‘ইঁদুর ও মানুষেরা’ এবং ‘প্লাবন ও একজন নূহ’ বই দুইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। প্লাবন ও একজন নূহ ইংরেজিতে অনুবাদের কারণে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হোসেনউদ্দীন হোসেনকে টপ হানড্রেড রাইটার্স বা সেরা ১০০জন লেখকের তালিকায় ভূষিত করে। এ সময় তাকে গোল্ড মেডেল প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজের ইন্টারন্যাশনাল বাইয়োজিক্যাল সেন্টার ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত যেসব লেখকের নাম প্রকাশ করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র হোসেনউদ্দীন হোসেনই রয়েছেন। এছাড়া দেশি-বিদেশি আরো অন্তত ৫০টি পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন এই বরেণ্য সাহিত্যিক।