এম আর মাসুদ, ঝিকরগাছা
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৩ শেষ হচ্ছে আজ। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার দীক্ষা এই শ্লোগানে গত ১২ মার্চ শুরু হওয়া সপ্তাহ নানা কর্মসূচির মধ্যে সোমবার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মধ্যেমে শেষ হবে। এ উপলক্ষে সোমবার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা কনফারেন্স রুমে আলোচনা সভা করা হয়। এতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নানাদিক তুলে ধরে বিস্তর আলোচনা করা হয়।
এদিকে, ঝিকরগাছা উপজেলার ৪৫টি গ্রামে কোন বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। উপজেলার একশ ৯১টি গ্রামের মধ্যে বিদ্যালয় আছে ১৪৬টি গ্রামে। ফলে বিদ্যালয় না থাকা গ্রামগুলোতে শিক্ষা বঞ্চিত শিশুর সংখ্যা বেশি। যা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অন্তরায় বলে মনে করেন সুধিজনরা।
উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার একশ ৯১টি গ্রামের মধ্যে ৪৫টি গ্রামে কোন বিদ্যালয়না থাকায় ওই সব গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হওয়ার আগে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা বেশি। উপজেলায় ১৩১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫১টি মাধ্যমকি বিদ্যালয়, ৩২টি দাখিল ও ২টি এবতেদায়ি (স্বতন্ত্র) মাদ্রাসা, ৩০টি কিন্ডার গার্টেন এবং ১০টি কলেজ রয়েছে।
যে সব গ্রামে কোন বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই সেখানে ‘পাড়ায় পাড়ায় স্কুল কর, নিরক্ষতা দূর কর, শিক্ষার আলো জ্বালব ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব’ এই শ্লোগান বাস্তবায়ন করা কঠিন হচ্ছে। এমন কী যে সব গ্রামে কোন বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই সে সব গ্রামে এই জাতীয় বহু শ্লোগান শতভাগ বাস্তবায়িত হয় না। যে গ্রামে কোন বিদ্যালয় নেই সে গ্রামে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অসংখ্য পরিবারের শিশু।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য মতে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ঝিকরগাছা উপজেলায় প্রাথমিকে ঝরে পড়া গড় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪৬০ জন। এদের অধিকাংশ দরিদ্র পরিবার ও বিদ্যালয় না থাকা গ্রামের শিশু। করোনা পরবর্তী ২০২২ সালে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০৮ জন। যার মধ্যে বালিকা ৮৯ জন ও বালক ১১৯ জন।
শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়মানুযায়ী নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ওই গ্রামে ২ হাজার জনসংখ্যা ও স্কুল গমন ইচ্ছুক দেড়শ ছাত্রছাত্রী থাকতে হবে। ২ কিলোমিটারের ভিতরে কোন বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলে হবে না। গ্রামে কেউ নিস্কণ্টক ৩৩ শতক জমি দিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে হবে।
উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের নারাঙ্গালী গ্রামের আবু হেনা বলেন, দুই বছর আগে আমাদের গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জমি প্রদান করা হলেও এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু করা হয়নি।
একই ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামে কোনো বিদ্যালয় নেই। এ গ্রামে তিন হাজার লোকের বসবাস। গ্রামটির আশেপাশে প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। ফলে গ্রামটির শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পাড়ি দিতে হয় আড়াই-তিন
কিলোমিটার পথ।
কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের মাহমুদুল হাসান বলেন, আমাদের গ্রামের চারপাশে যে চারটি গ্রাম রয়েছে সব কয়টিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব গ্রামের দূরুত্ব আড়াই-তিন কিলোমিটার। সচেতন ও শিক্ষিত পরিবারের শিশুরা দূরের গ্রামগুলোর বিদ্যালয়ে গেলেও দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা শিক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এতে করে আমাদের গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষার হার শতভাগের টার্গেট কখনো পূরণ হয়না।
কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান লাল্টু বলেন, আমাদের গ্রামে তিন হাজার লোকের বসবাস। কিন্তু কোন বিদ্যালয় নেই। পাশের গ্রামের বিদ্যালয় দুই-আড়াই কিলোমিটার দূরে হওয়ায় গ্রামের শিশুরা শতভাগ শিক্ষার আওতায় আসছে না। গ্রামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা জমির ব্যবস্থা করে দিতে পারব। আমরা গ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাই।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেহেলী ফেরদৌস বলেন, এক বছর চারটি গ্রামে নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ৩৩ শতক জমি দানের যাবতীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই কার্যক্রম শুরু হবে।
দেশে ১৫০০ নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আওতায় এসব বিদ্যালয় করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল হক বলেন, যেসব গ্রামে বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই সে সব গ্রামে পর্যায়ক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হবে।
