-
পদ ‘ভাগাভাগির’ রেশ চলছে এখনও
-
পূর্ণাঙ্গ দাবি এক পক্ষের, অপর পক্ষ চায় সম্মেলন
-
কমিটি নিয়ে নানা নাটকীয়তা
নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে নয় বছর সাত মাস আগে। সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচ নেতাকে মনোনীত করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে হতাশায় পড়েছেন পদপ্রত্যাশীরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন নেতা মনোনীত করতে কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতৃবৃন্দের ওপর দায়িত্ব দেন কাউন্সিলররা। নেতৃবৃন্দ জাহাঙ্গীর আলম মুকুলকে সভাপতি, মুছা মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক, মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল ও চৌধুরী রমজান শরীফ বাদশাকে সহসভাপতি এবং মনিরুল ইসলামকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন। এদিকে দীর্ঘদিন কমিটি গঠন না হওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগে দ্বিধা-বিভক্তি বেড়েছে। পাঁচ নেতাকে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজনৈতিক ও জাতীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দের দাবি, পাঁচ নেতা এক না থাকায় কমিটি গঠনে দেরি হচ্ছে। কেউ চান সম্মেলন, আবার কেউ চান এ কমিটিই পূর্ণাঙ্গ হোক। এতে দলীয় কার্যক্রম এক প্রকার ঝিমিয়ে পড়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা গ্রুপিংয়ে পিষ্ট হয়ে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
২০১৪ সালে কমিটি গঠনে ‘ভাগাভাগি’ :
২০১৪ সালে ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনিরের মধ্যে ‘ভাগাভাগি সিস্টেমে’ নেতা নির্বাচন করা হয়। সে সময় শাহীন চাকলাদারের অনুসারী হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম মুকুলকে সভাপতি ও মনিরুল ইসলামকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনিরের অনুসারী মুছা মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক ও মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল এবং চৌধুরী রমজান শরীফ বাদশাকে সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয়। তিন বছরের এ কমিটিকে অতিদ্রুত পূর্ণাঙ্গ করা নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এর কিছু দিন পর স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট মনির শিবিরে যোগ দেন সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল। এ সময় পাঁচ নেতার চার নেতা একজনের অনুসারী হিসেবে থাকলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
অ্যাড. মনির আউট নাসির উদ্দিন ইন :
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন পান মেজর জেনারেল (অব.) ডা. নাসির উদ্দিন। মনোনয়ন বঞ্চিত হন অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের ৫ নেতা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করেন। তবে নানা বিরোধে সাবেক এমপি অ্যাড. মনিরুল ও সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদের সঙ্গে ফের যোগ দেন সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল। থেকে যান বাকী তিনজন। শুরু হয় তীব্র গ্রুপিং। সেই থেকে সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিনের সঙ্গে আর দেখা যায়নি সভাপতি-সম্পাদককে।
কমিটি গঠন নিয়ে নানা নাটকীয়তা :
২০২২ সালে বর্ধিত সভা থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে জেলার আট উপজেলা ও পৌর শাখার সকল অসম্পূর্ণ কমিটি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয় যশোর জেলা আওয়ামী লীগ। এ সময় একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেন ঝিকরগাছার সভাপতি-সম্পাদক। সেই কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন স্বাক্ষর করলেও বিরত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। পরে একক স্বাক্ষরে কমিটি গঠন গঠনতন্ত্র পরিপন্থী হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হকের হস্তক্ষেপে সেই কমিটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি সেপ্টেম্বর মাসে গঠনতন্ত্র মেনে কমিটি গঠন করা হবে বলে জানানো হয়। জানা যায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিপক্ষে ছিলেন এমপি নাসির উদ্দিন। নতুন করে কমিটি গঠন করতে তিনি নিজে সভাপতি ও যুবলীগ নেতা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি জমা দেন। সেই থেকে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত আর আলোর মুখ দেখেনি।
জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পৌরমেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, যেহেতু ১০ বছরেও আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। আমরা চাই একটি আহ্বায়ক কমিটি করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হোক।
সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল বলেন, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাতে একবার এবং জেলায় চারবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছি। তবে কী কারণে তা অনুমোদন হয়নি আমার জানা নেই। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটি একদিনের জন্য হলেও পূর্ণাঙ্গ করতে হবে বলে দাবি তার।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারকে সাথে নিয়ে আগস্টের আগেই জেলার সকল আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে।