ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও ঝিকরগাছা ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমে ভোগান্তির শীর্ষে রয়েছে। পরিষদের সচিব ও উদ্যোক্তাদের কার্যক্রমে তাদের মধ্যে জনগণের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
জন্মনিবন্ধনে নাম সংশোধনের সরকারি ফি ৫০ টাকা এবং জন্ম সাল-তারিখ সংশোধনে ১০০ টাকার সাথে ২০ টাকা কোর্ট ফি দিয়ে আবেদন করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও উদ্যোক্তারা তা মানতে নারাজ। তারা ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করে বলে অনেক অভিযোগ রয়েছে।
জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমে ভোগান্তির বিষয়ে গদখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাজান আলী মোড়লের ভাতিজা সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন সচিবের দুর্নীতি বিষয়ে ফেসবুকে লাইভ গিয়ে সচিবের কাছে তার দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চান। ঠিক সেই লাইভ ভিডিওতে ইউনিয়নে সেবা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হয়ে তাদের বক্তব্যে সচিব এমএমআর মাহবুবের বিষয়ে গদখালী গ্রামের তহমিনা ঝর্ণা বলেন, আমার জন্ম নিবন্ধন ঠিক করার জন্য ৭৫০টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এখনো ঠিক করে দেননি।
রাসেল আহমেদ মুস্তাক বলেন, জন্ম নিবন্ধন করার জন্য আমার কাছ হতে ২ হাজার টাকা নিয়েছে। মাহফুজ আহমেদ বলেন, জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য তার স্ত্রীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছেন।
গদখালী পটুয়াপাড়া গ্রামের জীবন বলেন, আমার ভাগ্নের কাছে থেকে ১ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এখনো জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে দেননি।
বেনেয়ালী গ্রামের আসাদুজ্জামান বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ট্রেড লাইন্সেস নিতে পরিষদের গেলে তার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু ট্রেড লাইন্সেস ফি ৩০০ টাকা উল্লেখ রয়েছে। অন্যান্য খরচের হিসাবের জন্য টাকা নিলেও সেটার কোন রশিদ দেননি সচিব ।
ঝিকরগাছা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের শিক্ষার্থী রুবেল বলেন, সচিব আমাদের ১০ জনের নিকট হতে ৩ মাস আগে ৪ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোন কাগজপত্র পাইনি। ইউনিয়নের নওয়াপাড়া গ্রামের তন্নী, শ্রীরামপুর গ্রামের মাজেদা, হাড়িয়াদেয়াড়া গ্রামের সাগর, তানিয়া, আরিফুলের অভিযোগ ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে গেলে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা মুজাহিদুল ইসলাম রাসেল ও সোহানা আক্তার সরকারি ফি’র থেকে বেশি টাকা নিলেও প্রায় ৬ মাস থেকে এক বছর অতিবাহিত হলেও এখনো তাদের জন্ম নিবন্ধন পাওয়া যায়নি। ২০২২ সালের বছরের প্রথম মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে তবে বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করতে জন্মনিবন্ধন দরকার। কিন্তু এখনো তারা আমাদের সাথে তালবাহানা করছে। ইউনিয়ন থেকে ট্রেড লাইন্সেস দিতে সচিবকে একাধিক রশিদ ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের ২ জন উদ্যোক্তা যেভাবে মানুষের সাথে আচার-ব্যবহার করছে তার কারণে যে কোনো সময় তাদের সাথে সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে।
ঝিকরগাছার অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেবা’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাস্টার আশরাফুজজামান বাবু বলেন, দীর্ঘদিনের এই জনভোগান্তি দূর করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ইউনিয়ন পরিষদের যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এই ধরনের দুর্নীতির সাথে জড়িত থেকে মানুষজনকে ভোগান্তিতে ফেলছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের দুর্নীতি করতে আর কেউ সাহস না পায় সে ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
গদখালী ইউনিয়ন সচিব ও ঝিকরগাছা ইউনিয়নের সচিব (অ.দা.) এমএমআর মাহবুব বলেন, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে সরকারি ফি’র সঙ্গে সার্ভিস চার্জ নেয়া হয়। আমি ঝিকরগাছা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন টাকা গ্রহণ করিনে। বরং আমার পকেট থেকে দুপুরে হোটেলে খাবার খেতে হয়। গদখালী ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়ে বলেন, সেখানকার ঘটনা আমি মেনে নিতে পারি।
ঝিকরগাছা ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন বলেন, আমার এই ইউনিয়নের সচিব মারা যাওয়ার পরে গদখালীর সচিব সপ্তাহের দু’দিন সোমবার ও বুধবার ইউনিয়নে এসে কম বেশি মানুষকে সেবা দেন। তবে আমাদের ইউনিয়নের জরুরি ভিত্তিক সচিব দরকার। জন্মনিবন্ধন সংশোধনে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে সরকারি ফি’র বাইরে সচিবের অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক বলেন, আমরা মৌখিক অভিযোগ পাই। সেহেতু কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারিনে। তাদের বিরুদ্ধে যদি লিখিত অভিযোগ পাই তাহলে আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারি।