ইলিয়াস উদ্দীন, নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ফলে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবসে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজন হয় না কোনো অনুষ্ঠান। যেসব স্কুলে শহীদ মিনার আছে সেগুলো সারাবছর থাকে অযতœ – অবহেলায়। শুধুমাত্র প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আসলে চলে ধোয়ামোছার কাজ।
১৯৩৬ সালে ঝিকরগাছায় প্রতিষ্ঠিত হয় বিএম হাইস্কুল। এখানে ১হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। স্কুলটির বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, ঝিকরগাছার পূরাতন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিএম হাইস্কুল। লেখাপড়ার মানে উপজেলায় এই স্কুল সেরা। একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শিক্ষার্থীরা এমএল হাইস্কুলে অবস্থিত কে›ীদ্রয় শহীদ মিনারে যায়। জায়গা স্বল্পতায় সেখানে খুবই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কার্যালয় থেকে জানা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলায় প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ১৩১ টি। শহীদ মিনার আছে মাত্র ২৫ টি স্কুলে। কলেজ রয়েছে ৯টি শহীদ মিনার আছে ৪টি। উপজেলায় সর্বমোট ৫২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১৭টি স্কুলে শহীদ মিনার রয়েছে বাকি ৩৫টিতে কোন শহীদ মিনার নেই। উপজেলায় ৩২টি মাদ্রাসার মধ্যে কোনটিতেই শহীদ মিনার নেই।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসমত আরা পারভীন জানান, ১৩১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৫টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। যেগুলো স্থানীয়রা কিংবা সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছে। সব প্রাইমারি স্কুলে শহীদ মিনার নির্মানের জন্য তালিকা দেয়া হয়েছে।
১৯৫২ সালে মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়ার ৭০ বছর পরও ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সব স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। বিষয়টিকে খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করছেন উপজেলার বিশিষ্ঠ নাগরিকবৃন্দ।
খ্যাতিমান লেখক ও বাংলা একাডেমির পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক হোসেনউদ্দীন হোসেন বলেন, ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য অকাতরে প্রাণ দিতে হয়েছিল। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সেই ইতিহাস জানতে হবে। এজন্য প্রতিটা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকাটা জরুরি। একজন মানুষের অন্তরে দেশাত্মবোধ, জাতীয়তাবোধ কিংবা ভাষার প্রতি প্রেমের বীজ বপণের জন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানই সেরা জায়গা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রশিদ জানান, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ নেই। তবে একটি নির্দেশনা এসেছিল সব বিদ্যালয়ে একই আকার ও আয়তনের শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাভাব কিংবা জায়গা সংকটের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারছেনা। তিনি আরো জানান, পৌর সদরে সরকারি এমএল হাইস্কুলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই তারা এখানে এসে শ্রদ্ধা জানায়।