নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহে আষাঢ়েও প্রত্যাশিত বৃষ্টির দেখা নেই। মাঠঘাট সর্বত্র খড়খড়ে শুকনো। এ অবস্থায় বৃষ্টিনির্ভর রোপা আউশ চাষাবাদে খরচ বেড়ে যাবে। ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে মনে করছেন না অনেকেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মতে, গত ৬ মাসে জেলায় মাত্র ৮১.০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর এখন বর্ষা মৌসুম। কিন্তু কাঙ্খিত বৃষ্টি হচ্ছে না।
কৃষি অফিস মতে, এবার জেলার ৬ উপজেলায় ১ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২৪ জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এখনও বেশ কিছু চাষি বৃষ্টির আশায় তাদের জমি ফেলে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় শুধুমাত্র আর্থিকভাবে অধিকতর স্বচ্ছল চাষি ছাড়া অন্যরা এবার রোপা আউশ চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার হাজামপাড়া মাঠে কথা হয় কৃষক আলি হোসেনের সাথে। তিনি জানালেন, এ মৌসুমে তিনি তার ২০ শতাংশ জমিতে বিআর ৪৮ জাতের রোপা আউশের আবাদ করেছেন। আগেভাগেই তীব্র খরা পরিস্থিতি বিরাজ করায় তিনি চৈত্রের তৃতীয় সপ্তাহে ধান রোপন করেছেন। আসছে দুই সপ্তাহের মধ্যেই ধানগুলো তিনি কাটতে পারবেন বলে আশা করছেন। আলি হোসেন জানালেন, রোপা আউশ চাষ সম্পূর্ণ বৃষ্টিনির্ভর আবাদ। মোটামুটি প্রাকৃতিক পানি অর্থাৎ বৃষ্টির ওপর নির্ভর করেই চাষিরা এর আবাদ করে থাকেন। এতে সেচ খরচ একরকম লাগে না বলে চাষিরা কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পান। তবে এবার বৃষ্টির দেখা মেলেনি, বাধ্য হয়েই চাষিরা বিকল্প সেচ দিয়ে আউশের আবাদ করেছেন।
আলি হোসেন জানালেন, ধান আবাদে প্রতি এক বিঘা অর্থাৎ ৪০ শতক জমির জন্য দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার সেচের প্রয়োজন হলেও এবার তীব্র খরার কারণে বিঘাপ্রতি কমপক্ষে ৫ হাজার হাজার টাকার সেচের পানির প্রয়োজন হবে। শুধুমাত্র স্বচ্ছল কৃষকই তাদের জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে পারলেও অধিকাংশ কৃষক তা পারবেন না। ফলে তাদের জমিতে রোপা আউশের আবাদ বিঘিœত হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ খামারবাড়ির উপপরিচালকের অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা মৌসুমে জেলায় জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৮৮৬ হেক্টর জমি রোপা আউশের আবাদের আওতায় এসেছে। আবাদের আওতায় আসা জমির পরিমাণ হলো ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ২ হাজার ২৬২ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ২৯৯ হেক্টর, কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর, মহেশপুর উপজেলায় ১৫ হাজার ১০ হেক্টর, শৈলকুপা উপজেলায় ১৪ হাজার ৪৭২ হেক্টর, হরিণানাকুন্ডু উপজেলায় ১ হাজার ২৮০ হেক্টর।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কৃষি অফিসার নূর ই নবীর সাথে কথা বললে তিনি জানালেন, বৃষ্টিনির্ভর আবাদ হলেও এবারের তীব্র খরার কথা বিবেচনা করে কৃষকরা আগেভাগেই তাদের রোপা আউশের জমিতে বিকল্প সেচব্যবস্থা করেছেন বিধায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জণ না হলেও ধানের আবাদ থেমে নেই। তবে চলতি মৌসুমে বৃষ্টি না হলে সেচখরচ বেশ বেড়ে যাবে বলে তিনি মনে করছেন। রোপন মৌসুমের কিছুদিন আগেভাগে যেসব চাষি আউস চারা রোপন করেছিলেন তাদের ধান আর মাত্র সপ্তাহ দুুয়েকের মধ্যে কাটতে পারবেন বলে জানালেন উপজেলা কৃষি অফিসার নূর ই নবী।