নিজস্ব প্রতিবেদক, ঝিনাইদহ
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর আচরণবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা লংঘনের দায়ে ঝিনাইদহের তিনটি আসনে নৌকার প্রার্থীকেই নির্বাচনী অনুসন্ধানী কমিটির সম্মুখে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। একইসাথে কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না তার কারণ জানাতে পৃথক চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। ওই তিন প্রার্থী হলেন নৌকা প্রতিকের ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই, ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের আনোয়ারুল আজিম আনার।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনী অনুসন্ধানী কমিটি ঝিনাইদহ-১ আসনের চেয়ারম্যান ও যুগ্ম জেলা জজ গোলাম নবী স¦াক্ষরিত এক পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১০ ডিসেম্বর শৈলকুপার দুধসর ইউনিয়নের ভাটইবাজারে নৌকার পক্ষে লাঠিসোটা নিয়ে শ্লোগান দিয়ে মহড়া চালায় প্রার্থীর সমর্থকরা। এছাড়া এমপি আব্দুল হাই-র পুত্র ওইদিন শেখপাড়া বাজারের পথসভা করেন। দুদিন পর ১২ ডিসেম্বর সারুটিয়া ইউনিয়নের কাতলাগাড়ী বাজারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মামুন মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের প্রকাশ্যে হুমকী দেন। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর মনোহরপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া সরকারী প্রাইমারি স্কুলে ধরহরাচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম প্রকাশ্যে জনসভা করে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেন যা আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ১১ (গ) ও ১২-র সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এসব ঘটনায় সংসদ সদস্য আব্দুল হাই অথবা তার মনোনীত প্রতিনিধিকে ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনী অনুসন্ধানী কমিটির কাছে ব্যাখা দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। ঝিনাইদহ-২ আসনে নৌকার প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমিকে আগামী ১৮ ডিসেম্বর ব্যাখা দাখিলের নির্দশ দিয়েছেন নির্বাচনী অনুসন্ধানী কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ তৌফিকুল হাকিম। পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয় গত ১১ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ শহরের মকবুল প্লাজার ফুড সাফারি রেষ্টুরেন্টে নৌকা প্রতিকের সমর্থনে মত বিনিময়সভায় হরিণাকুন্ডর বিভিন্ন এলাকায় সভাসমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। ভুটিয়ারগাতি গ্রামে নৌকার সমর্থনে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক রাজু আহম্মেদ স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ন বক্তব্য দিযেছেন যা আচরণ বিধিমালা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া, সংসদীয় এলাকার পোড়াহাটী ইউনিয়নের ইস্তেফাপুর গ্রামে নৌকা প্রতিকের জনসমাবেশে ঝিনাইদহ সদর থানা যুবলীগের আহবায়ক ইব্রাহীম খলিল রাজাও স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল সম্পর্কে কটাক্ষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন যা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমন্বয়ক শরীফ মাহমুদুল হাসান লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । এটিও আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ১১ (গ) ও ১২ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ খোকন আরচণবিধি লংঘনের আনীত অভিযোগে বলা হয়, গত ১০ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ উপজেলাধীন পৌর অডিটরিয়াম কক্ষে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ শমসের বলেছেন, মজিুবকোট পরে যদি নৌকার বিরুদ্ধে ভোট চান, এই মজিুবকোট জনতার মাঝে খুলে নেয়া হবে। সেখানে উপস্থিত মোবারকগঞ্জ চিনিকল (মোচিক) শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসূল তার বক্তব্যে বলেছেন, আওয়ামী লীগের মানুষ হয়ে নৌকায় ভোট না দিলে ভোটের মাঠে যাওয়ার দরকার নেই।
ইউপি চেয়ারম্যান ওহিদজ্জুামান ওদু তার বক্তব্যে বলেন, নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করলে ক্ষমা করা হবে না। সেখানে উপস্থিত উপজেলা পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক সোহাগও আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের বাইরে কেউ ভোট দিলে তাকে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে এবং আমার ইউনিয়নে ঢুকতে দেওয়া হবে না মর্মে বক্তব্য দেন যা প্রত্যেকের একক ও সামষ্টিকভাবে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৪ (১), ১১ (ক) এবং ১২ এর লঙ্ঘন। এহেন পরিস্থিতিতে বর্ণিত অভিযোগের বিষয়ে প্রত্যেককে নিজনিজ বক্তব্য বা ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য আগাম ১৭ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ জেলা জজ আদালত ভবনে অবস্থিত যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১, ঝিনাইদহ এর কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অথবা উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য বা ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাতে জেলা নির্বাচন অফিসার রোকনুজ্জামান নিশ্চিত করেছেন।
