দেলোয়ার কবীর, ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের দোহারো গ্রামের জিল্লুুর রহমানের মত অসংখ্য চাষি খুশিতে আত্মহারা হয়েছিলের তাদের ক্ষেতের অসময়ের গ্রীস্মকালিন পেঁয়াজের অবিশ^াস্য ফলন দেখে। গতবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হওয়ায় তারা ভেবেছিলেন এবার তাদের ঘরে আসবে প্রচুর টাকা আর তা দিয়ে দায় দেনা শোধ করে সময় কাটাবেন সুখে। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের ব্যাপক দরপতনে সে আশার গুড়ে বালি পড়েছে।
দোহারো গ্রামের মাঠে আলাপকালে জিল্লুুর রহমান জানালেন, এবার তিনি চার বিঘা জমিতে নিসাখ জাতের উচ্চফলনশীল পেঁয়াজের চাষ করেছেন। চার কাঠার প্লটে ৩০ মণের মত ফলন পেয়েছেন। এতে বেজায় খুশি তিনি। সবটুকু জমির পেঁয়াজ তুললে যা পাবেন তাতে সার, বীজ, সেচ, দিনমজুর ও জমির লিজের টাকা শোধ করে নিজের ইচ্ছেমত কিছু খরচ করবেন। কিন্তু বাজারে হাজার টাকা দরে কয়েক মণ পেঁয়াজ বিক্রি করে হিসেব কষে দেখলেন যা লাভ হবে তা দিয়ে সম্পূর্ণরুপে কিছুই করা যাবে না।
জিল্লুুর রহমানের মত আরও কয়েকজন পেঁয়াজ চাষির সাথে কথায় একই সুর পাওয়া গেল। তাদের মতে, যাদের খেতে ভালো ফলন হয়েছে তারা বিঘাপ্রতি ১১০ থেকে ১২০ মণ ফলন পেয়েছেন। ফলনে সবাই খুশি। কিন্তু সেই খুশি কেড়ে নিচ্ছে বাজারে পেঁয়াজের দর। তারা মনে করেন সুপেয় পানির চেয়েও বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক কম।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জমান খান বলেন, পেঁয়াজ চাষিদের উৎপাদন খরচ কমাতে প্রণোদনার আওতায় বীজ, সার ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়েছে যাতে তারা আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হতে পারেন। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীদের নিবিড় তত্বাবধান ও উন্নত প্রযুক্তিগত সহায়তা ও উপকরণ ব্যবহারের ফলে এবার উন্নতজাতের এ পেঁয়াজ চাষে তারা লাভবান হবেন আর্থিকভাবে। কিন্তু দামের কারণে তাদের লাভ আশানুরূপ হচ্ছে না জানিয়ে ওই কৃষি কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করে বলেন, বাজারে দাম বাড়লেই কৃষকের মুখের ম্লান হওয়া হাসি চওড়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ জেলা খামারবাড়ির উপপরিচালক আসগর আলি বলেন, ঝিনাইদহ সদর, কালিগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, সীমান্তবর্তী মহেশপুর, শৈলকুপা ও হারিণাকুন্ডু উপজেলায় গত মৌসুমে ২শ’ ৬৪ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৬শ’ টন গ্রীস্মকালিন পেঁয়াজের উৎপাদন হলেও এবার জমির পরিমাণ বেড়ে ৪শ’ ৬৭ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে যা শতকরা ৪৩ ভাগ বেশি।
পেঁয়াজের মান যেমন ভালো হয়েছে, বেড়েছে আকার এবং ওজন দুুইই। পেঁয়াজ ও রসুন আবাদে শৈলকুপার চাষিরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন বলে জানান তিনি। অসময়ের গ্রীস্মকালীন পেঁয়াজ দেশের সার্বিক চাহিদা মেটাতে এবং চাষিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে কিছুটা ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন আসগর আলি।
