ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় রাতের আঁধারে নারীদের অসংলগ্ন অবস্থার ভিডিও ও ছবি ধারণ করাসহ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন নারীদের শ্লীলতাহানি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত দুই বছর ধরে এমন চাঞ্চল্যকর সাইবার অপরাধ চলে আসছে বলে জানা গেছে উপজেলার প্রত্যন্তপল্লী সাপখোলা গ্রামে। এমন ঘটনায় রাতের ঘুম হারাম হয়েছে গ্রামবাসীর। রাত জেগে গ্রামবাসী দিচ্ছে পাহারা দিয়েও থামানো যাচ্ছে না এমন কা-। এরই মাঝে গভীর রাতে ভিডিও ধারণের সময় জানালার ভেতর দিয়ে ওই চক্রের একটি মোবাইল কেড়ে নিতে সক্ষম হয় এক কৃষক। তাতে দেখা গেছে দেড় শতাধিক ভিডিও-ছবি, যার সবই স্বামী-স্ত্রী আর নারীদের ব্যক্তিগত।
এমন ঘটনা জানাজানির পর পুলিশ আর সাইবার ক্রাইম টিম নেমেছে অভিযানে। তবে এখনও পর্যন্ত আটক করতে পারেনি কাউকে, হয়নি থানায় মামলাও।
এ ব্যাপারে সাপখোলা গ্রামের বেসরকারি চাকরিজীবী যুবক রবিউল ইসলাম জানান, চাকরির কারণে বাইরে থাকার সুবাদে স্ত্রী বাড়িতে একাই থাকেন। এমতাবস্থায় প্রায়ই রাতে ঘরে পাশে মানুষের আনাগোনা এবং ঘরে কাঠি দিয়ে খোঁচানোর চেষ্টায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন স্ত্রী। ফলে চাকরি ছেড়ে এখন বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে।
একই গ্রামের কৃষক ফেরদৌস জানান, হঠাৎ তার ঘরের ভেতরে জানালা দিয়ে টর্চের আলোর উপস্থিতি টের পান। কৌশলে জানালার কাছে দাড়িয়ে দেখতে পান একটি মোবাইল ঢুকিয়ে ভিডিও করছে এক যুবক, সে সময় তিনি থাবা দিয়ে মোবাইলটি কেড়ে নিতে সক্ষম হলেও পালিয়ে যায় অপরাধী। ঈদের দিন রাতে এমন ঘটনার মুখোমুখি হন তিনি।
ইউপি সদস্য টিটো শিকদার জানান, অপরাধী চক্রের একটি মোবাইল তারা পেয়ে সামাজিক ভাবে বসে জানার চেষ্টা করেন সেটি কার মোবাইল। পরে ফোনটি পুলিশ কে দিয়েছেন তারা। মোবাইলটিতে তারা দেখেন গ্রামের বিভিন্ন পরিবার ও নারীদের দেড় শতাধিক ভিডিও-ছবি রয়েছে, যার সবই ব্যক্তিগত। তবে ভিডিওগুলি ধারনের সময়কাল দেড় বছরেরও বেশী ।
এমন পরিস্থিতিতে গ্রামে রাতে পাহারা বসানোও হয়েছে তাতেও থামানো যায়নি চক্রটিকে। এসবের মাঝেও ঘটে চলেছে এমন গুরুত্বর সাইবার অপরাধ।
এদিকে, কেড়ে নেয়া ওই মোবাইলের সিমটি একই গ্রামের এক তরুণীর বলে সনাক্ত হলেও ওই তরুণী জানান স্থানীয় আজমুলের ছেলে পার্থ ওরফে তুরাগ নামে তার এক আত্মীয় জোর করে কেড়ে নেয় দুই বছর আগে। তিনি আরো বলেন, ব্লাকমেইল করে ছবি তুলে তাকে সিমের কথা ফাঁস করলে ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া এবং হত্যার হুমকিও দেয় ওই যুবক।
এদিকে তুরাগ ও তার পরিবারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামজুড়ে। রাতে নিজ বাড়ি-ঘরে নিরাপত্তার সাথে ঘুমোতে পারছে না এলাকাবাসী। সুশীল মহল মনে করছেন, দ্রুত চক্রটি গ্রেফতার না হলে সমাজে বাড়বে বিশৃঙ্খলা আর সামাজিক অস্থিরতা।
এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, নারীদের ব্যক্তিগত ভিডিও সহ নানা ভিডিও ধারণ হয়েছে। তবে এমন ঘটনায় থানায় এখনো কেউ মামলা করেনি। তারা ঘটনা জানতে পেরে, গ্রামবাসী যে মোবাইল পেয়েছিল তা জব্দ করেছে। সাপখোলা গ্রামের পার্থ ওরফে তুরাগ নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এছাড়াও পৃথকভাবে সাইবার ক্রাইমের টিম কাজ শুরু করেছে।