ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে ৯০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনা কাটায় কোটি টাকার দুর্নীতি করা হয়েছে। শিক্ষা অফিসের স্লিপ ফান্ডের টাকায় কেনা এ সব মেশিন লাগানোর কয়েক মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া ১২ হাজার টাকার মেশিন ২৫ হাজার টাকায় কেনা দেখানো হয়েছে। এ ভাবে স্লিপ ফান্ডের প্রায় সোয়া কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের এক সাব ডিলারের মাধ্যমে বাজার মূল্য ছাড়াও অতিরিক্ত মূল্যে এ সব মেশিন বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষকদের দিয়ে কেনানো হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এ অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। পোড়াহাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ডিজিটাল হাজিরা মেশিন নষ্ট থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই তারা হাজিরা খাতায় সাক্ষর করছেন। শুধু ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় এই চিত্র নয়, জেলার বাকি ৬টি উপজেলার প্রাথমিক স্কুলে বসানো বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। ফলে স্কুলে শিক্ষকদের উপস্থিতির তথ্য ডিজিটাল হাজিরা মেশিনে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। বেশির ভাগ স্কুলে শিক্ষকরা নিয়মিত আসেন না বলে শিশু শিক্ষার্থীরা জানান।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক এনামুল কাদের খান ১৫৮/৬৫ নং স্মারকে স্লিপ প্রকল্পের টাকা দিয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন বাধ্যতামূলক কেনার পরিপত্র জারি করেন। সে মোতাবেক ঝিনাইদহ জেলার ৯০৭টি প্রাইমারি স্কুলে ২ কোটি ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনা হয়। তথ্য নিয়ে জানা গেছে প্রাইমারি স্কুলে লাগানো এ সব মেশিনের বাজার মূল্য মাত্র ১২ হাজার টাকা। কিন্তু ২৫ হাজার টাকা দিয়ে অতি নি¤œমানের এই বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার ফলে সরকারের ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা পানিতে পড়েছে। তবে অতিরিক্ত এই টাকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা পকেটস্থ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঝিনাইদহের চরখাজুরা, লাউদিয়া, সাবেক নিত্যনন্দপুর, রতনহাট ও পূর্বতেতুলবাড়িয়া প্রথামিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে তাদের মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। অন্যান্য অনেক বিদ্যালয়েও একই অবস্থা বলে শিক্ষকরা জানান।
জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিস ফেয়ার নামে স্থানীয় একটি কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় করে। ফেয়ারকে আবার ঢাকা বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান টেকনো সিস্টেম নামের আরেকটি কোম্পানী মালামাল সরবরাহ করে। তাদের ক্রয় রিসিটে ২৫ হাজার টাকা দাম ধরা হয়। এ বিষয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন বিক্রেতা লিপু জানান, যে মেশিনের দাম সর্বোচ্চ ১০-১২ হাজার টাকা সেখানে তিন ডবল দাম দিয়ে মেশিন কেনা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান বাজার দর অনুযায়ি প্রতিটি ডিজিটাল বায়োমেট্রিক মেশিনের দাম ১২ হাজার টাকা করে হলে ৯০৭টি মেশিনের মূল্য দাড়াচ্ছে ১ কোটি ৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। অথচ সরকারি প্রকল্পে খরচের খাতায় অতিরিক্ত ১ কোটি ১৭ লাখ ৯১ হাজার বেশি ব্যায় দেখানো হয়েছে।এ বিষয়ে জেলা সনাকের সভাপতি সায়েদুল আলম জাানান, এই টাকা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিয়েছে। স্লিপ ফান্ডের টাকায় কেনা বেশির ভাগ মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। দুর্নীতির বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমার যোগদানের আগে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা হয়েছে। কত টাকায় কেনা হয়েছে তাও আমি বলতে পারি না। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। এ বিষয়ে প্রকল্প সাব কন্ট্রাকটর মামুন হোসেন জানান, টেকনো কোম্পানির মেশিন দেয়া হয়েছে তিন বছরের ওয়ারেন্টি দিয়ে। অনেক মেশিন নষ্ট হলেও মেরামত করে দেয়া হচ্ছে। তবে তিনি অতিরিক্ত মূল্যের বিষয়টি এড়িয়ে যান।