সালমান হাসান: মূল কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে শুরু হচ্ছে যশোর টাউন হল ময়দানের ঐতিহাসিক স্বাধীনতা মঞ্চের উন্নয়ন ও সংস্কার। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী মঞ্চটির সংস্কারসহ সেখানে গ্রিন রুম, ওয়েটিং রুম ও মেকআপ রুম সংযোজন করা হবে। ফলে যশোরের মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। বহুদিন ধরে মঞ্চটির সংস্কার ও উন্নয়নের দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। এ বছরের মহান স্বাধীনতা দিবসের দিন মঞ্চটির উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের উদ্বোধন হচ্ছে।
আগামীকাল ২৬ মার্চ দুপুর ১২টায় টাউন হল ময়দানের স্বাধীনতা মঞ্চের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের উদ্বোধন করা হবে। স্থানীয় সরকার পল্লী ও উন্নয়ন সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য্য এই সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করবেন। যশোর ইনস্টিটিউটটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, মঞ্চের মূল কাঠামো ও অবয়ব ঠিক রেখে মঞ্চের সংস্কার ও উন্নয়ন হবে। এক্ষেত্রে ব্যয় হচ্ছে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংস্কারের পাশাপাশি মঞ্চে সংযোজন হচ্ছে একটি গ্রিন রুম, একটি ওয়েটিং রুম ও একটি মেকআপ রুম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় এগুলো ব্যবহার করবেন সাংস্কৃতিক কর্মী ও কলাকুশলীরা। ফলে নাচ, গান ও নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে বহুমুখী সুবিধা সৃষ্টি হবে।
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর। দিনটি বাঙালি জাতির জন্য স্মরণীয় এক দিন। এদিন শত্রুবাহিনীর দখল মুক্ত যশোরে স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ভাষণ দেন। ওয়াশিংটন পোস্ট, লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ ও নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার প্রতিনিধিসহ বহু বিদেশি সাংবাদিক সেদিনের ওই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। আর সেই ঐতিহাসিক জনসভায় তাজউদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্যরা টাউন হল ময়দানের পশ্চিম কোনের মঞ্চটি থেকে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ফলে ঐতিহাসিকতার নিরিখে মঞ্চটির নামকরণ ‘স্বাধীনতা মঞ্চ’ হয়। জনসভায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ফণিভূষণ মজুমদার, রওশন আলী, মোশাররফ হোসেন, তবিবর রহমান সরদার, এম আর আকতার মুকুল ও জহির রায়হান প্রমুখ।
দীর্ঘ দিনের অযত্ন-অবহেলায় বেহাল দশায় ছিলো ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠ ও স্বাধীনতা মঞ্চ। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বহু ঘটনাবলীর সাক্ষি এই মাঠটির মর্যাদা রক্ষায় এটিই প্রথম উদ্যোগ। বহুদিন থেকে যশোরের মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাস্কৃতিক অঙ্গন থেকে মাঠ ও স্বাধীনতা মঞ্চটির সংস্কার ও উন্নয়নের দাবি ছিলো।
বছর দুই আগে যশোর সার্কিট হাউসে এক সভায় মঞ্চটি সংস্কারের দাবি তোলা হয়। ওই সভায় মঞ্চটি সংস্কারের জোরালো দাবি তোলেন মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ। সভায় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য্য দাবির প্রতি জোরালো সমর্থন দেন। এছাড়া সভায় উপস্থিতদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর উপপ্রধান অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, দৈনিক কল্যাণের প্রকাশক ও সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্বা একরাম-উদ-দৌল্লা ও তৎকালীন মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু মঞ্চটিও সংস্কারে জোর দাবি জানান।