কারবালা রোডের চায়ের দোকানে বসে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আড্ডা
নিজস্ব প্রতিবেদক
চায়ের দোকানে আড্ডার নামে নারীদের উত্ত্যক্ত, চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং মাদক সেবনের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে যশোর শহরের কারবালা রোডে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রাচীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা চায়ের দোকানগুলো। ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের প্রধান ফটকে প্রবেশের আগে সড়কের পাশে গড়ে ওঠা এই চায়ের দোকানগুলোতে সকাল থেকে রাত অবধি ভিড় থাকে উঠতি বয়সী ছেলেদের আড্ডায়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই ৩টি চায়ের দোকানের নিয়ন্ত্রণ ছিলো যশোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলন। যার দেখাশুনা করতো তারই পোষ্য কিশোর গ্যাং লিডার টালিখোলা এলাকার বাসিন্দা হাসানুল ইসলাম হাসান ও মিশন পাড়ার বাসিন্দা ছাত্রলীগ নেতা রাজিব।
অভিযোগ আছে, জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনের নির্দেশে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাদকের বেচাবিক্রি করতো হাসানুল ইসলাম হাসান। এই কাজে সহযোগিতা করতো ছাত্রলীগ নেতা রাজীব এবং তাদের গড়ে তোলা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। চায়ের দোকানে আড্ডার নামে কলেজ পড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীদেরও নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতো চক্রটি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দেয় টাক মিলন। কিছুদিনের জন্য থেমে ছিল তার পোষ্য কিশোর গ্যাং সদস্যদের কর্মকাণ্ড। তবে পুনরায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের এক শিক্ষার্থী দৈনিক কল্যাণকে জানিয়েছে, রানা, বাবু, মঈন, তানভীরসহ আরও ১০ থেকে ১৫ জন নিয়মিত কলেজ এলাকায় আড্ডা দেয়। তারা সবাই মূলত টাক মিলনের কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য। এরাই জোর করে শিক্ষার্থীদের দিয়ে মাদকের কেনাবেচা করাতো। যদি কেউ রাজি না হতো তাহলে তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো।
ওই শিক্ষার্থী আরও জানিয়েছে, সরকার পতনের পর কিছু দিন তাদের এলাকায় দেখা না গেলেও এখন আবার সক্রিয় হয়েছে। আবার শুরু করেছে মাদকের বিক্রি ও ইভটিজিং।
অপর এক নারী শিক্ষার্থী জানান, কলেজে আসা যাওয়ার সময় চায়ের দোকানে থাকা কয়েকজন বখাটে প্রায় প্রতিদিনই বিরক্ত করতো। ভয়ে কাউকে কিছু কখনো বলিনি। ওদের কাছে সব সময় চাকু থাকে। আমাকে দেখলে শিষ দেয়, বাজে বাজে কথা বলে। আমি পাত্তা দেয়না। কিন্তু ভয় করে। কখন জানি ওরা উলটা পালটা কিছু করে ফেলে।
ওই নারী শিক্ষার্থী আরও বলেন, মাঝে কিছুদিন তাদের দেখা যেত না। আবার এখন নিয়মিত আসছে।
স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজ্জাক কলেজের এই মোড় দিয়ে চারপাশে শহরে প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তা আছে। ফলে একটা অপরাধ করে সহজেই পালিয়ে যেতে পারে তারা। বিশেষ করে মধ্যরাতে এবং ভোরবেলায় এইস্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
এবিষয়ে ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের অধ্যাক্ষ জে এম ইকবাল হোসেন বলেন, চায়ের দোকানগুলোর কারণে কলেজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সেখানে কলেজের শিক্ষার্থীরা আড্ডা দেয়, বাইরের উঠতি বয়সী ছেলেরাও সেখানে বসে। বিষয়টি আমার নজরে আসলে আমি একবার দোকানদের সতর্ক করেছি। কলেজের কোন শিক্ষার্থীকে যেন সেখানে বসতে না দেয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে আমি কোন অভিযোগ কখনো পায়নি।
এবিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসনাত বলেন, মাদককারবারী, কিশোর গ্যাং সদস্যসহ চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এই এলাকায় আমরা বিশেষ নজর রাখবো।