নিজস্ব প্রতিবেদক
অবশেষে শেষ হলো যশোর প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের দীর্ঘ যাত্রা। ৩১১ দিন পর ৩৬ ম্যাচের লিগ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। দীর্ঘ এ যাত্রায় অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও লিগে যশোর ক্রিকেট ক্লাবের দাপটের কোন ভাটা পড়েনি। আসাদ ক্রিকেট একাডেমিকে হারিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো যশোর প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের শিরোপা ঘরে তুললো যশোর ক্রিকেট ক্লাব। রানার্সআপ হয়েছে আসাদ ক্রিকেট একাডেমি। শামস্-উল-হুদা স্টেডিয়ামে ৬ উইকেটে জয় পায় আমিনুর-ইমরানুজ্জামান-টিপু সুলতানরা।
চ্যাম্পিয়ন হতে হলে লিগের শেষ ম্যাচে জয়ের কোন বিকল্প ছিল না আসাদ ক্রিকেট একাডেমির হাতে। অপরদিকে এক পয়েন্ট পেলে চ্যাম্পিয়ন; এমন সমীকরণে কারণে মাঠে নামে দল দুটি। তবে এদিন আসাদ ক্রিকেট একাডেমি কোন প্রতিরোধই গড়তে পারেনি। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ধুঁকতে ধুঁকতে পুরো ৫০ ওভার খেললেও ১৮৭ রানের বেশি করতে পারেনি তারা। তবে বোলিংয়ে এসে প্রথম ১০ ওভারে মধ্যে ৩৫ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে কিছুটা জয়ের সম্ভবনা জেগেছিল। আগামী বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জারে জায়গা পাওয়া উইকেটকিপার ইমরানুজ্জামান দ্রুতই সেই চাপ থেকে মুক্ত করেন যশোর ক্রিকেট ক্লাব। ইমরান এদিন ওপেন করতে নেমে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন। ৬২ বলে ফিফটি করা ইমরান শেষ পর্যন্ত ৮৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। এই ইনিংসের খেলা পথে চতুর্থ উইকেটে প্রথমে রায়হান উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ৪৯ রানে জুটি গড়েন। রায়হান ৫১ বলে ৩টি চারে ২৫ রান করেন। রায়হান আউট হলে বহিরাগত কোটায় খেলা কুষ্টিয়ার আবু বকর জীবনকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে অপরাজিত ১০৬ রানের জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন ইমরান। শেষ দিকে যশোর ক্রিকেট ক্লাবের জয়ের থেকে ইমরানের শতক না জীবনের ফিফটি আগে হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। তবে ইমরানের সেঞ্চুরি না হলেও পরপর দুই ছক্কায় দলের জয়ের সাথে নিজের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জীবন। জীবন যখন ছয় মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন তখনও যশোর ক্রিকেট ক্লাবের হাতে ছিল ৭২ বল। জীবন ৫০ বলে ১টি চার ও ৪টি ছয়ে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন। ইমরানের ৯৪ বলের ইনিংসে ছিল ৫বাউন্ডারি ও ৪টি ওভার বাউন্ডারির মার। বল হাতে আসাদের হয়ে মিরাজুল ইসলাম মুন ৩৪ রানে দু’টি, একটি করে উইকেট নিয়েছেন রাফসান আল মাহমুদ ও শামীম শরীফ।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৭৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে আসাদ ক্রিকেট একাডেমি। সেখান থেকে শামীম শরীফ ও রেজওয়ানের ব্যাটিংয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ১২ রানের মধ্যে দুজন আউট হলে খুব বেশি এগোতে পারেনি তারা।
দলের হয়ে হাসানুজ্জামান ২৯ বলে একটি চারে ১২, রাফসান আল মামুন ৪৬ বলে দু’টি চারে ২১, মাহাদী হোসেন ১৭ বলে একটি চার ও ছয়ে ১৪, শামীম শরীফ ৬০ বলে দু’টি চারে ৩৮, রেজওয়ান হোসেন ৫১ বলে চারটি চারে ৩৩, মিরাজুল ইসলাম মুন ১১ বলে একটি চারে ১১, হামিদুল হক ২০ বলে একটি চারে অপরাজিত ১৫ ও হাসানুর রহমান ১৬ বলে একটি ছয়ে অপরাজিত ১০ রান করেন।
বল হাতে যশোর ক্রিকেট ক্লাবের রায়হান উদ্দিন ৩৫, আবু বক্কর জীবন ৩৩ ও টিপু সুলতান ৪৪ রানে নিয়েছেন দু’টি করে উইকেট। তিনটি উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি খরচ করেছেন ২৯ রান।
২০১৫ সালে প্রিমিয়ার ডিভিশনে অভিষিক্ত দলটি টানা চার শিরোপা জয়ে জায়গা করে নিয়েছে রেকর্ড বইয়ে। সম্প্রতি এমন রেকর্ড করতে পারেনি কোন ক্লাব।
এদিকে জেলার শীর্ষ এ লিগের পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে অনেকটা চুপিসারে। পুরস্কার বিতরণের শুরু হওয়ার ৩০ মিনিট আগে ক্লাবের খেলোয়াড় কর্মকর্তাদের জানানো হয় পুরস্কার প্রদান করা হবে। একই সময়ে জানানো হয় স্থানীয় ক্রীড়া রিপোর্টারদের। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ক্লাব কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়রা।
পুরস্কার বিতরণে উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক এমএ আকসাদ সিদ্দিকী শৈবাল, কোষাধ্যক্ষ ও ক্রিকেট পরিষদের সম্পাদক সোহেল মাসুদ হাসান টিটো, নির্বাহি সদস্য খায়রুজ্জামান বাবু, এহসানুল হক সুমন, আম্পায়ার অ্যান্ড স্কোরার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ খান বিপ্লব প্রমুখ।