আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিশ্ব রাজনীতি আবারও পারমাণবিক পরীক্ষার হুমকিতে কাঁপছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা পুনরায় শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর এবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও পারমাণবিক পরীক্ষা প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী শান্তিপূর্ণ ভারসাম্য ভেঙে নতুন এক অস্থিরতার যুগ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোউসোভ ঘোষণা দিয়েছেন যে, দেশটি এখনই পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত।
তার ভাষায়, আর্কটিক অঞ্চলের নোভায়া জেমলিয়া ঘাঁটিতে খুব অল্প সময়ের নোটিশেই আমরা এমন পরীক্ষা চালাতে পারি।
এই নোভায়া জেমলিয়া ঘাঁটিই ছিল সোভিয়েত আমলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিস্ফোরণের স্থান—যেখানে ১৯৬১ সালে ‘জার বোম্বা’ নামের একটি বোমা পরীক্ষা করা হয়েছিল, যা ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক বিস্ফোরণ হিসেবে পরিচিত।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে রাশিয়া আর কোনো পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরীক্ষা চালায়নি। তখন থেকেই দেশটি পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার আধুনিকায়নের দিকে মনোযোগ দিলেও, সরাসরি পরীক্ষার পথে যায়নি।
বিশ্বের প্রায় সব দেশই এখন পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তি (সিটিবিটি)-এর পক্ষে। তবুও, কিছু বড় শক্তি এখনো তা অনুমোদন দেয়নি—যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের মতে, রাশিয়ার এই ঘোষণা নতুন এক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে থাকা কৌশলগত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলো এখন হুমকির মুখে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি রাশিয়া সত্যিই পরীক্ষা চালায়, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করবে। এর ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা বাড়বে এবং কূটনৈতিক উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
২১ শতকে এ পর্যন্ত কেবল উত্তর কোরিয়াই প্রকাশ্যে পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে। তারা ২০০৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ছয়টি পরীক্ষা করেছে।
রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর দেশগুলো এতদিন কেবল কম্পিউটার সিমুলেশন ও গবেষণাগারে ‘সাবক্রিটিক্যাল পরীক্ষা’ চালিয়ে এসেছে, যা বিস্ফোরণ ছাড়াই অস্ত্রের কার্যকারিতা যাচাইয়ের একটি প্রক্রিয়া।
