নিজস্ব প্রতিবেদক
বুধবার দুপুর ১২টা ৩৯ মিনিট। যশোর জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগ ১২২ ও ১২৩ নম্বর কক্ষে রোগী দেখছেন রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবক। রোগীরাও তাকে ডাক্তার নামে সম্বোধন করছেন। ওই যুবকও রোগীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে দিচ্ছেন ব্যবস্থপত্র। প্রথম দেখায় কারো বোঝার উপায় নেই আদৌ ওই যুবক ডাক্তার নন। অথচ, তিনি একজন মেডিকেল অ্যাসিটেন্ট ট্রেইনিং স্কুল (ম্যাটস্) শিক্ষার্থী। হাসপাতালে এসেছেন ইন্টার্ন করতে। স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ব বিভাগে এ ধরনের ঘটনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখ এড়িয়ে যায় কীভাবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ইন্টার্নশিপ শেষ হওয়ার পরও একজন ম্যাটস্ শিক্ষার্থী নিয়মিত চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন অথচ কোনো পদক্ষেপ নেই, এটা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
সরজমিন দেখা যায়, বহির্বিভাগের ১২৩ নম্বর রুমের সামনে রোগীর দীর্ঘ লাইন। কক্ষে রোগী দেখছেন অর্থো সার্জারি বিভাগের কনসালটেন্ট ডাক্তার মোশারফ হোসেন ও একজন অনারারি মেডিকেল অফিসার। আর তাদের সামনেই বসে আছেন রফিকুল ইসলাম। কিছু সময়ের জন্য ডাক্তার মোশারফ হোসেন চেম্বার ছেড়ে বাইরে যেতেই অনারারি মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে রফিকুলও রোগী দেখা শুরু করেন এবং রোগীদের বিভিন্ন ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। অথচ তিনি এই বিভাগের কেউ নন, এমনকি এমবিবিএস শিক্ষার্থীও নন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতি বছর বিভিন্ন বেসরকারি ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্নশিপের জন্য হাসপাতালে আসেন। তারা সাধারণত ছয় মাস থেকে এক বছর ডাক্তারদের সঙ্গে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেখেন এবং ডাক্তারদের সহযোগিতা করেন। কিন্তু তাদের রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেওয়া বা ওষুধ লেখার কোনো নিয়ম নেই। ইন্টার্ন শেষ হলে শিক্ষার্থীদের হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী ইন্টার্ন শেষ হলেও হাসপাতাল ছাড়তে চান না। তারা বিভিন্ন কৌশলে চেম্বারে বসে যান এবং রোগী দেখা শুরু করেন। এ সুযোগে অনেকেই হাসপাতালের অভ্যন্তরে কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রোগী পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ওষুধ উত্তোলনের ঘটনাও ঘটে থাকে।
হাসপাতালের ভেতরে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রফিকুল ইসলামের ইন্টার্নশিপ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো হাসপাতাল ছাড়েননি। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিনি নিয়মিত চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন। শুধু তাই নয়, নিজের অবস্থানকে বৈধ করার জন্য বিভিন্ন সিনিয়র চিকিৎসকের অনুপস্থিতির সুযোগও নিচ্ছেন। এতে সাধারণ রোগীরা প্রতারিত হচ্ছেন। কারণ রোগীরা মনে করছেন তারা একজন যোগ্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন, অথচ তাদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন একজন অযোগ্য ব্যক্তি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হাবিবা সিদ্দিকা ফোয়ারার বক্তব্য জানতে তাকে ফোন করলে তিনি রিসিভি করেননি।