পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পৌরবাসীর অন্যতম নাগরিক অধিকার। কোনো পৌরবাসীর এ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে শুধু যে ওই পৌর এলাকার বাসিন্দারাই উপকৃত হন তা নয়। বহিরাগত বিপুল সংখ্যক মানুষও উপকৃত হয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, শহরের বাসিন্দাদের চেয়ে বহিরাগত মানুষের সংখ্যাই বেশি। এ ক্ষেত্রে কোনো পৌর এলাকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ মানেই গণমানুষের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। যশোরের ঐতিহ্যবাহী পৌর এলাকায় এই পরিচ্ছন্ন পরিবেশটা নষ্ট হচ্ছে পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের অভাবে। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় শহরের যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে পুরো শহর ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব ময়লা-আবর্জনা সড়ক ও খোলা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহর অপরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধময় করে তুলেছে। একসময় শহরে ময়লা রাখার জন্য ১৩০টি ডাস্টবিন ছিল। এর মধ্যে এলাকাবাসী ও অবৈধ দখলদাররা বেশিরভাগ ডাস্টবিন ভেঙে ফেলেছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে ১০-১২ মিনিটের পথ হেঁটে দূরের কোনো ডাস্টবিনে বর্জ্য ফেলতে হচ্ছে।
এটা যে কত বড় কঠিন কাজ তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারবেন না। সব চেয়ে বড় কথা হলো বর্জ্য ফেলার এই কঠিন কাজটি করতে হয় প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে মহিলাদের। সব বাসায় যে কাজের লোক আছে তাতো আর নয়। আর থাকলেও সেই মানুষটিও মহিলা। বাসা অরক্ষিত রেখে দূরের ডাস্টবিনে বর্জ্য ফেলা নিঃসন্দেহে একটি অমানবিক পীড়ন। বর্তমানে পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে মাত্র ৪০-৪৫টি ডাস্টবিন আছে। ডাস্টবিন সংকটের কারণে পৌরবাসী তাই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলছে। এতে রাস্তাঘাট ও খেলার মাঠে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে। এতে পচা দুর্গন্ধের মধ্য দিয়ে নাকে রুমাল চেপে চলাচল করতে হয়।
পত্রিকাটির প্রতিবেদক তার সরেজমিন রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাড়া-মহল্লার রাস্তা থেকে শুরু করে বড় রাস্তার পাশে জমে রয়েছে ময়লার স্তুপ। ডাস্টবিনে ময়লা না ফেলে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এতে গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল ও কাকের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ময়লা ছড়িয়ে পড়ছে। সামান্য বাতাসে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নাকে রুমাল চেপে পথচারীদের চলাচল করতে হচ্ছে। এছাড়া ডাস্টবিনের অভাবে বাসাবাড়ির আশপাশের পানি নিষ্কাশন নর্দমায় ময়লা ফেলছে অনেকে। ফলে শহরের অধিকাংশ নর্দমা ভরে যাচ্ছে ময়লা-আবর্জনায়।
পৌর কর্তৃপক্ষ শহরে ডাস্টবিনের সংখ্যা অনেক কম বলে স্বীকার করেছে। যেগুলো আছে সেগুলোও অপসারণের জন্য বিভিন্ন সময় মহল্লাবাসীর কাছ থেকে আবেদন এসেছে। নতুন করে ডাস্টবিন নির্মাণ করতে চাইলেও জায়গা সংকটের কারণে নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। কারণ কেউ এ কাজে জায়গা দিতে চান না। আবার অনেক সময় ডাস্টবিন ভেঙে ফেলা হয়। নতুন ডাস্টবিন নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা বর্তমানে নেই।
পৌরসভার পক্ষ থেকে অবশ্য আশার বাণী শোনানো হয়েছে, তবে এই দুর্ভোগ বেশিদিন পোহাতে হবে না। খুব শিগগিরই শহরের মোড়ে মোড়ে ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য ঢাকনাযুক্ত কন্টেইনার বসানো হবে। সিটি রিজিওন ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য থেকে শহরে যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় এ কারণে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য চালু করা হচ্ছে ঢাকনাযুক্ত কন্টেইনার ডাস্টবিন। এ প্রকল্প চালু হলে শহরের সব আবর্জনা ঢাকনাযুক্ত স্থানে ফেলা হবে। তারপর ওই বর্জ্য নেয়া হবে শহরের ঝুমঝুমপুরের ময়লা প্রক্রিয়াজাতকরণ স্থানে।
এককথায় বলা যায় মানুষ এখন ডাস্টবিন যন্ত্রণায় আছে। যশোর শহরকে দৃষ্টিনন্দন করার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্ব শর্ত হলো পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। নোংরা-আবর্জনায় ভরা প্রশস্ত রাস্তা, ময়লা দুর্গন্ধ পানিতে উপচে পড়া উন্নত মানের ড্রেন এমনতরো সমস্যা রেখে কোনোক্রমেই দৃষ্টিনন্দন শহর গড়া যাবে না। মানুষের সুবিধা নিশ্চিতকরণের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগকে আমার স্বাগত জানাই। সেই সাথে দাবি জানাই মানুষের সার্বক্ষণিক বিরক্তিকর ডাস্টবিন সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক।