রোগীকে জিম্মি করে
ভিন্ন কৌশলে চাঁদাবাজি
সুমন ব্যানার্জী: এক মধুর সম্পর্ক বেসরকারি পঙ্গু হাসপাতালের মালিক ডাক্তার আর সন্ত্রাসীদের মধ্যে! তারা যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে রোগীকে জিম্মি করে স্বজনদের গলা কাটছে। এ এক কৌশল চাঁদাবাজি। চিকিৎসা বাবদ মোটা অংকের বিল ধরিয়ে দেয়া হয় স্বজনদের হাতে। যা অন্যদের থেকে দশ গুন পর্যন্ত বেশি বিল করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। যশোর শহরের মুজিব সড়কে অবস্থিত ওই পঙ্গু হাসপাতালে কৌশল চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় খুন হতে হয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের আড়পাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মফিজুর রহমানকে। গভীর অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মুজিব সড়কের রেলগেট এলাকার পঙ্গু হাসপাতালে শুধু হাড় ভাঙা (অর্থপেডিক) রোগীদেরই চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। সে কারণে দূরদুরান্ত থেকে ওই ধরণের রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। আর এ ধরনের হাসপাতাল যশোর এলাকায় আর নেই। তাই জিম্মি করা হয় প্রতিনিয়ত এখানে আসা রোগীদের ভর্তির পর। লম্বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জরুরি অপারেশনের কথা বলা হয়। রোগীর অবস্থা ভালো হলেও ডাক্তার আব্দুর রউফ রোগীর স্বজনদের বলেন-রোগীকে বড় ধরণের অপারেশন করতে হবে। জরুরিভাবে না করলে পঙ্গু হয়ে যাবে। অনেক সময় চুক্তি ছাড়াই রোগীকে অপারেশন করা হয়। এরপরে বিল হাঁকানো হয় সাধারণের দশ গুন পর্যন্ত টাকা। কিন্তু বিলের কথা শুনে অনেক রোগী বা তার স্বজনেরা নির্বাক হয়ে যায়। তখন ওই হাসপাতালের কর্মচারি বাবু, চয়ন ও শিমুলরা রোগীর স্বজনদের পরামর্শ দেয়-‘তাদের বড় ভাই পলিথিন বাবু অথবা ম্যানসেলের কাছে যাওয়ার’। ম্যানসেল মোবাইল ফোনে আর পলিথিন বাবু সরাসরি এসে ডাক্তার রউফের সাথে কথা বলে। এরপর ধার্য করা বিল থেকে কিছুটা কমিয়ে দেয়া হয়। যা পুরটায় একটি নাটক। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ওই লম্বা বিলের একটা অংশ সন্ত্রাসী চক্রকে দেয়। আর কেউ লম্বা বিলের প্রতিবাদ করলে রোগীর স্বজনদের হুমকি-ধামকি দেয়া হয়। আবার টাকা আদায় করার জন্য সন্ত্রাসীদের ব্যবহারও করা হয়।
সূত্র আরো জানিয়েছে, পঙ্গু হাসপাতালে ম্যানসেল, পলিথিন বাবু ও রায়পাড়ার কয়লাপট্টির ইসরাইল ড্রাইভারের ছেলে সজলসহ তিনজনের নেতৃত্বেই সন্ত্রাসী কর্মকা- হয়ে থাকে। এদের সহযোগী হিসেবে বাপ্পি, আশিকুর রহমান আশিক, শিমুল, রেলগেট পশ্চিমপাড়ার মাদক দম্পতি রেখা-ফায়েকের ছেলে রমজান, মৃদুল, প্রিন্স, আশরাফুল কবীর শিকদার ও রায়পাড়ার আরেক রমজান, মামুন, মাসুম, জাকারিয়া, সাদী, নাদিম ও আলম কাজ করে। সহযোগিরা হাসপাতাল এলাকায় ঘোরাফেরা করে। আর সুযোগ বুঝে রোগী ও তাদের স্বজনদের নিয়ে ‘বড় ভাই’ ম্যানসেল, পলিথিন বাবু ও সজলের কাছে যায়।
এমনই একটি ঘটনা ঘটে ৩১ মার্চ দুপুরের দিকে। মা আছিয়া বেগমের হাসপাতাল বিলের টাকা দিতে ৭ তলা থেকে নিচে ডাক্তার আব্দুর রউফের কক্ষে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের আড়পাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান। ২৭ মার্চ ভর্তি হয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত তার মায়ের বিল করা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। মাত্র পাঁচদিনে এত বিলের বিষয় নিয়ে ডাক্তার আব্দুর রউফের সাথে বাকবিত-া হয় মফিজুরের। বাকবিত-া শেষে হাসপাতাল গেটে আসা মাত্র পলিথিন বাবু ও সজলসহ কয়েকজন অপহরণ করে তুলে নিয়ে যায় রায়পাড়ার এক আইনজীবীর বাড়িতে। সেখানে আটকে রেখে বাপ্পি, আশিকুর রহমান আশিক, শিমুল, রেলগেট পশ্চিমপাড়ার রমজান, মৃদুল, প্রিন্স, আশরাফুল কবীর শিকদারসহ কয়েকজন বেদম মারপিট করে। পরে তাকে আবার পঙ্গু হাসপাতালে আন্ডার গ্রাউন্ড আনা হয়। এখানে খুন করে লিফটের নিচে লাশটি ফেলে রাখা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। দুইদিন নিখোঁজ থাকার পরে গত শনিবার দুপুরে পুলিশ ওই মরদেহ উদ্ধার করে। আর এরপর থেকে ওই সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে চলে গেছে।
স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, সজল আইন শৃঙ্খলা বাহীনির সোর্সের পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন এলাকায় নানা ধরণের অপরাধ-অপকর্ম চালিয়ে আসছে।
আরো পড়ুন:
পাল্টে যাচ্ছে ময়না তদন্ত রিপোর্ট!
যশোরে নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পর কালীগঞ্জের একজনের লাশ উদ্ধার
পঙ্গু হাসপাতালের মালিক ডা. রউফকে নিয়ে ফেসবুকে ঝড়