নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজিবুল আলম, সিভিল সার্জন মাসুদ রানা, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হুসাইন সাফায়েত প্রমুখ।
সভায় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, জেলা পরিষদের অর্থায়নে শহরের পালবাড়ি এলাকায় একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ করা হবে। চলতি অর্থ বছরে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলে আগামী বছর জুলাই থেকে কাজ শুরু হবে।
পৌরসভার পক্ষে জানানো হয় ঈদ উল আযহা সামনে রেখে যশোর পৌরসভার ভিতরে কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন এখনও চাওয়া হয়নি।
সভায় সিভিল সার্জন বলেন, উপজেলায় ডেঙ্গু শনাক্ত করার পর্যাপ্ত কীট নেই। এখন ডেঙ্গুর চাপ স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। এছাড়া পৌরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা টিসিবির পণ্য বিতরণ ও টোল আদায়ে ব্যস্ত রয়েছে। তারা নিজেদের ইপিআর এর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। শার্শা উপজেলা হাসপাতালে মাদকের আঁখড়া বসছে। তিনি পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের ভিতরে ধুমপান বিক্রির দোকান না বসানোর জন্য দাবি করেন। হাসপাতালের অভ্যন্তরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স’র দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য হাসপাতাল প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। এছাড়া চুড়ামনকাটি এলাকায় গড়ে উঠা কবির মিলিটারির ননী ফল নার্সারির বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ননী ফল যৌন উত্তেজক ভেষজ। ননী ফল নার্সারির মালিক এলাকায় প্রভাবশালী এবং তার গুন্ডাবাহিনীও রয়েছে। তার এই নার্সারির বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবসা নেওয়ার জন্য আহ্বান করেন তিনি।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হুসাইন সাফায়েত বলেন, রোগীর চাপ ৩ গুণ। বর্তমানে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ৮০ টার মত বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল এলাকা কাভার করে। অফিস চলাকালীন সময়ের বাইরে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠে।
হাসপাতালের ইস্যুতে জেলা প্রশাসক বলেন, কেশবপুর হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক নেই। অ্যাম্বুলেন্স মানুষের লাইভ লাইন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাস্টার রোলে হলেও একজন চালক কেশবপুরে নিয়োগ করতে হবে। যেন মানুষ জরুরি সময়ে সেবা পেতে পারে।
এদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর গভীর নলকূপ স্থাপন কাজের ধীরগতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, ঠিকাদারের তালবাহনায় কাজ পিছিয়ে যেতে পারে না। মানুষকে হয়রানি বন্ধের জন্য তাগিদ দেন তিনি। হাসপাতালে পানির সংকট সমস্যা এখনও ঠিক না হওয়ায় জেলা প্রশাসক বলেন, জনস্বাস্থ্য না পারলে এলজিইডি তার কাজ করবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনায় জেলা প্রাথমিক কর্মকর্তা জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কৃষি বিপনন, বিসিক ও ওষুধ প্রশাসনের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, বাজারে মসলা ও লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যত্রতত্র ওষুধের দোকান খোলা হচ্ছে। ওষুধের দোকানে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি ও ড্রাগ লাইসেন্স না থাকা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন তিনি।
সভার এক পর্যায়ে অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন ঝিকরগাছার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নামে বেনামে নিউজ পোর্টাল ইচ্ছা খুশি মত সংবাদ পরিবেশন করছে। তাদের অধিকাংশ নিউজ ভুয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঝিকরগাছায় একটা রাস্তার কাজ নিয়ে ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি খবর নিয়ে দেখেছেন সত্যিকার অর্থে কোনো অনিয়ম হয়নি। পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, বেনাপোল কেন্দ্রীয় এসব ভুয়া সাইডের ছড়াছড়ি বেশি। এবিষয়ে জেলার তথ্য অফিস থেকে সভায় জানানো হয়, ৫ আগস্টের পর থেকে ভুয়া সাইডের সংখ্যা বাড়ছে। তারা ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন। এই সব সাইডের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসন বলেন, প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একটি করে গুজব ছড়ানো অনলাইন পোর্টার শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সভায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, তুলা উন্নয়ন বোর্ডসহ বেশ কিছু দপ্তরকে তাদের কাজ যথাযথ ভাবে পালনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।