নিজস্ব প্রতিবেদক
অভাবের সংসার। তারপর আবার মাথার উপর ছাদ হয়ে থাকা বাবাও পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। বড় ছেলে অরিদুল ইসলাম আকাশ পড়াশোনা করে চাকরি করবে, ধরবে সংসারের হাল। এটাই ছিল মা শারমিন সুলতানা জুলির চাওয়া। তবে চাকরি নয়, আকাশ চেয়েছিলেন ক্রিকেটের ইনকাম দিয়ে সংসারের হাল ধরতে। তবে ক্রিকেটে কোথায়ও কূল কিনারা পাচ্ছিলেন না। যশোর অনূর্ধ্ব-১৬ ও ১৮ দলে দুইবার করে ট্রায়াল দিয়েও বাদ পড়েন। এমন সময় হতাশ আকাশের পাশে বড় ভায়ের মতো দাঁড়ান যশোর জেলা দলের অলরাউন্ডার এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজু। আকাশের মায়ের কাছ থেকে তিন বছরের সময় নেন রাজু। তবে সেই সময়ের আগে যশোর ক্রিকেটের পরিচিত মুখ হয়ে উঠা আকাশ অর্থ পেতেও শুরু করেছেন।
সোমবার শেষ হওয়া ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়ে পেয়েছেন এক লাখ টাকা। তবে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতিতে কত টাকার চুক্তিতে খেলছেন তা বলেননি আকাশ।
তবে এই পর্যায়ে আসতে নানা বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে আকাশের। ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগেও প্রথম দিকে উপেক্ষিত ছিলেন। গত মৌসুমে গ্রুপ পর্বে রিজার্ভ বেঞ্চ গরম করেই পার করে দেন। তবে সুপার লিগের প্রথম ম্যাচে সেরা একাদশে সুযোগ পান আকাশ। তবে ইন্দ্রিরা রোড ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৫ ওভারে ২৫ রানে উইকেট শূন্য ছিলেন। পরের দুই ম্যাচে ৪ উইকেট করে নিয়ে চলে আসেন আলোচনায়। উইকেট শিকারের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে মৌসুম শেষ করেন ১৫ উইকেটে। এতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের বিশেষ ক্যাম্পে সুযোগ পেয়ে যান এ বাঁহাতি স্পিনার।
তারপর থেকে যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই উইকেট শিকারির ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন। সোমবার শেষ হওয়া ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ৩৭ উইকেট নিয়ে হয়েছেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। আকাশ বাঁহাতের ঘূর্ণিতে ১৫ ইনিংসে ৩.৮৭ ইকোনমি ও ১৩.৭৬ গড়ে এই উইকেট নেন। ওয়ানডে ফরম্যাটের এ গড় ও ইকোনমি যে কোন ক্রিকেটারের জন্যই ঈর্ষণীয়।
আকাশ বলেন, ২০১৯ সালের মার্চে বাবা মারা যাওয়ার পর আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। তারপরও আবার যশোরের বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে সুযোগ পাচ্ছিলাম না। এরপর আসলো করোনা। কোথায় কি করবো তাই ভেবে হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এই সময় এসএস ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের কোচ শামসুদ্দিন শাহাজি নন্টু ও যশোর জেলা দলের অলরাউন্ডার রাজু ভাই পাশে দাঁড়ান। এরপর রিপন অটোস টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ভাল করায় মাসিক বৃত্তি পেয়ে যায়। তাতে ক্রিকেট খেলায় আর কোন বাধা হতে পারেনি। যেখানেই খেলেছি নিয়মিত উইকেট পেতে থাকি। আগামী মৌসুমে যদি সুযোগ পায় তাহলে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলবো।
