নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর মেডিকেল কলেজের (যমেক) ছাত্রাবাসে ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেনকে পিটিয়ে হাত ও দুই পা ভেঙ্গে দেয়ার এক সপ্তাহেও মামলা হয়নি। যমেক কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির আজ মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও দেয়নি। তারা আরো দুই কার্যদিবস সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন।
আহত চিকিৎসকের ভাই জাহাঙ্গীর আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গত মঙ্গলবার রাতে আমার ভাইকে বেধড়ক মারধর করলেও কোন বিচার পেলাম না। থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা হিসাবে গ্রহণ করেনি পুলিশ। অভিযুক্তরা তার ভাইয়ের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া মোটরসাইকেলে এসে তার ভাইকে হুমিক দিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে মারামারির সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত সহকারী হোস্টেল সুপার ডা. ফয়সাল কাদির শাওন তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তিনি অভিযুক্তদের রক্ষায় তদন্ত প্রভাবিত করছেন। ফলে এই তদন্ত কমিটি দিয়ে ভালো কোন ফলাফল আশা করছি না।
এই বিষয়ে সার্জারি বিভাগের প্রধান ও তদন্ত কমিটির প্রধান নুর কুতুব-উল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তদন্ত কমিটির সদস্য প্রভাষক আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি তদন্তের স্বার্থে আমরা দুইদিন বাড়িয়েছি। নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।
এই বিষয়ে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মহিদুর রহমান বলেন, অধিকতর তদন্তের স্বার্থে দুইদিন সময় দেয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যের মধ্যে একজন যদি প্রভাবিত করে; তা গুরুত্বপূর্ণ হবে না। দ্রুতই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, মেডিকেল কলেজের তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার পরেই অভিযোগটি মামলা হিসাবে গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে মেডিকেল কলেজের ছাত্রবাসের ১০৪ নম্বর কক্ষে জাকির হোসেন নামে এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে পিটিয়ে দুই পা, দুই হাত ও বুকের পাজরের একটি হাঁড় ভেঙে দেয় তার সহপাঠীরা। জাকির হোসেনের অভিযোগ, ইন্টার্ন চিকিৎসক মেহেদী হাসান লিয়ন, শামীম হাসান, আব্দুর রহমান আকাশ, তানিমসহ আরও তিন-চারজন ছাত্রবাসের ১০৪ নম্বর কক্ষে প্রতিদিন মাদকের আড্ডা বসান। রাতভর চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। ওই কক্ষের পাশেই তার কক্ষ। এ কারণে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। ফলে তিনি প্রতিবাদ জানান। এর জেরে হকিস্টিক ও জিআই পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে।
হামলাকারীরা তার নগদ অর্থ ও মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে হলে মাদক সেবন ও বহিরাগতরা অনুপ্রবেশ করলেও ছাত্রবাসের সহকারী হোস্টেল সুপার ডা. ফয়সাল কাদির শাওন কোন ব্যবস্থা নেয় না। বরং তিনি নানাভাবে ওই সকল শিক্ষার্থীদের ইন্ধন দিয়ে আসছেন অভিযোগ জাকিরের। আহত ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও বিষয়টি গোপন রাখা হয়। এর পর বৃহস্পতিবার বিকেলে আহতের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম যশোর কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি জানাজানি হয়। অভিযুক্ত ডা. ফয়সাল কাদির শাওনের বক্তব্যের জন্য মুঠোফোনে চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, হামলার শিকার জাকির হোসেনের বিরুদ্ধেও অসামাজিক কাজে জড়িত এমন চক্রের সঙ্গে চলাফেরার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নকালে একবার বহিস্কার হন। একই ধরনের অপরাধে যশোর মেডিকেল কলেজেও তার ইন্টার্ন কোর্সের কাগজপত্র এখনও কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায়নি। জাকির হোসেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হরিশ্বর গ্রামের মৃত সুরুজ জামানের ছেলে।
আরও পড়ুন: খুলনায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা মামলায় দু’জনের যাবজ্জীবন
