শাহারুল ইসলাম ফারদিন
তাঁতানো-পোড়ানো রোদে কাহিল যশোরের প্রাণ-প্রকৃতি। তাপমাত্রার পারদ ৪০ ছাড়িয়ে তীব্র দাবদাহে রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে গলে যাচ্ছে রাস্তার পিচ। গতকাল শহরতলীর ঝুমঝুমপুরে যশোর-নড়াইল সড়কের রাস্তার পিচ পর্যন্ত গলে যেতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে মানুষ। কিন্তু তেমন সুসংবাদও নেই বৃষ্টিপাতের। উল্টো; জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। যশোর আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এমনটিই বলা হয়েছে।
যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস মতে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকেল ৩টার সময় তা বেড়ে ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। এদিন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল যশোর। বুধবার (১৭ এপ্রিল) যশোরে মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার এই তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সহসাই এ তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি মিলছে না বলে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের মতে যশোরের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তামপাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়ায় হলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গলে যাচ্ছে রাস্তার পিচ। গতকাল শহরতলীর ঝুমঝুমপুরে যশোর-নড়াইল সড়কের রাস্তার পিচ পর্যন্ত গলে যেতে দেখা গেছে। বেড়েছে রোগের প্রার্দুভাব। রোগ থেকে রেহাই পেতে চিকিৎসকেরা সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তেজ বাড়তে থাকে। দিনভর দাপট দেখাতে থাকে জ্যৈষ্ঠের তেজি সূর্য। দুপুরের দিকে তাপের দহন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। ফলে দুপুরের দিকে শহরে মানুষজনের চলাফেরা বেশ খানিকটা কমে আসে। এদিকে, বিকালের দিকে সূর্যের আগুন ঢালা কমে এলেও গরম অব্যাহত ছিল।
এদিকে, গরমের দাপট চরমে ওঠায় মৌসুমি ফলের দোকানে মানুষ উঁকি দিচ্ছে। গরম থেকে বাঁচতে রাস্তার লেবুর শরবত, ঠান্ড মাঠা, ডাবের পানি ও আখের রস খেতে দেখা যায় অনেককে। এছাড়া তরমুজ, বাঙ্গি, ন্যাচপতির মতো রসালো ফলও বেশ বিক্রি হয় এদিন। এছাড়া রোদের তেজ থেকে রক্ষা পেতে এদিন বহু মানুষকে মাথার উপর ছাতা ধরে চলাচল করতে দেখা গেছে।
এদিকে তীব্র তাপদাহে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। সেচ ও নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেও টেকানো যাচ্ছে না আম। আর এতেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এবার আমের উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করছেন তারা। সদরের ডাকাতিয়ার আব্দুর রশীদ বলেন, আমের জন্য এ সময় বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন। বৃষ্টি না হবার কারণে এবার আমের আকার বেশ ছোট হবে। সে সাথে আমের উৎপাদনও কমে আসবে। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই আমের দাম বেশ চড়া থাকবে। কেননা গাছে তো আম নেই।
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, প্রচন্ড গরমের কারণে হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ৬৪৪জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়াও বহিঃবিভাগ থেকে ১৮শ থেকে ২হাজার রোগী ওষুধপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বেশির ভাগ শিশু ঠান্ডা জ্বর, কাশি, নিউমনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি আরও জানান, গরমে বাড়ছে অস্বস্তি। কড়া রোদ ও আবহাওয়ার কারণে বয়স্ক মানুষ নানা ধরণের অসুখ-বিসুখে বিপর্যস্ত করছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে জ্বর, শ^াসকষ্ট, গ্যাস্টিক, পেটে ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, স্টোকে।
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ভাইরাল ফিভার বা মৌসুমি রোগ থেকে রক্ষা পেতে বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে। স্যালাইন ও পানি বেশি বেশি পান করাতে হবে। সূর্যের আলো এড়িয়ে চলা, রোদে ঘোরাঘুরি করা দেয়া যাবেনা। ছাতা ব্যবহার করা, সূতির কাপড় পরতে হবে, সঠিক জুতা নির্বাচন করা, ফাস্টফুড ও বাসী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।