যশোর সদর হাসপাতালে ধারণক্ষমতার প্রায় তিন গুণ রোগী
বর্তমান আবহাওয়া শিশুদের জন্য
প্রতিকূল। ঠাণ্ডা কিংবা গরম পরিবেশে
এদের রাখা যাবে না। সময়োপযোগী
পোশাক ব্যবহার করতে হবে
– শিশু বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান
শাহারুল ইসলাম ফারদিন: তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। খাঁ খাঁ রোদে পুড়ছে প্রকৃতি। নাভিশ্বাস উঠেছে রোজাদারদের। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না। গরমের প্রভাবে প্রতিদিন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যাই বেশি।
বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের।
একেকটি শয্যায় শুয়ে আছে অসুস্থ দু’টি কিংবা তিনটি শিশু। কারো জ্বর, কারো নিউমোনিয়া, কারো বা অন্য কোনো সমস্যা। সবাই অসুস্থ। উপরে ঘুরচ্ছে সিলিং ফ্যান। তারপরও প্রচ- গরম। শয্যার পাশেই শিশুদের মা বসে আছেন। সন্তানের অসুস্থতায় এভাবেই দিনের পর দিন পার করছেন তারা। এ চিত্র যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের। হঠাৎ করেই হাসপাতালে শিশু রোগীদের ভিড় বেড়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। প্রচ- তাপদাহ আর আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া ও জ্বরসহ বিভিন্ন রোগ বেড়েছে। একদিকে ভ্যাপসা গরম অন্যদিকে দুর্গন্ধময় পরিবেশে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। ধারণক্ষমতার অধিক রোগী থাকায় নার্সরাও শিশুদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সোমবার দুপুরে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে-শিশু ওয়ার্ডে ২৪টি বেডের বিপরীতে ৬১ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। রোগীদের চাপ বেশি থাকায় অতিরিক্ত ১৪টি শয্যা আনা হলেও একেকটি শয্যায় ২/৩ জন করে রোগী।
শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স জোসনা আরা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে শিশু রোগীর অনেক চাপ। শিশু ওয়ার্ডে রোগীদের চাপ থাকায় আমরা চিকিৎসা দিতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছি। তবুও আমরা সেবা দিতে চেষ্টা করছি।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ইকবাল হোসেন বলেন, শিশু ওয়ার্ডে যেমন ভিড় ঠিক তেমন অন্যান্য ওয়ার্ডেও। ডাক্তার সংকট থাকায় রোগীদের চিকিৎসা দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
সদরের খোরছিয়া থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু সুরাইয়ার বাবা আলম হোসেন বলেন, যেভাবে গরম পড়ছে এতে রোগীরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দেয়াড়ার শিশু লাবীব হোসেন (১৫ মাস) এর মা পান্না বেগম বলেন, হাসপাতালে অনেক সমস্যা রয়েছে, একদিকে বেড সংকট অন্যদিকে ডাক্তারও কম। তাছাড়াও হাসপাতালে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
এদিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও বর্তমানে পাচঁ শতাধিক রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্থান সংকুল না হওয়ায় মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের।
পুরুষ ও নারী মেডিসিন এবং গাইনি ওয়ার্ডেও রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে অনেক রোগীকে।
মাগুরার শালিখার পেয়ারপুরের দুই বছরের রাফিয়ার বাবা রবিউল ইসলাম ও বাঘারপাড়ার দৌলাতপুরের এক বছরের শিশু জায়শার মা মৌসুমি বেগম বলেন, যশোরের মানুষ এ হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখানে এসে চিকিৎসা সেবা পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ৫শ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ হলে মানুষের ভোগান্তি কমতো।
হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জেসমিন সুমাইয়া বলেন, এত বেশি রোগী আসছে যে তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিশু ও তাদের অভিভাবকদের ভিড়ে অনেক সময় হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। শিশুরা জ্বর-শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
যশোর মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান জানান, এখন শিশুরা ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। এখন যে আবহাওয়া তা শিশুদের জন্য প্রতিকূল। এ পরিস্থিতিতে শিশুদের সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, ঠাণ্ডা কিংবা গরম পরিবেশে শিশুদের রাখা যাবে না। সময়োপযোগী জামাকাপড় ব্যবহার করতে হবে।
এ ব্যাপারে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আখতারুজ্জামান জানান, হাসপাতালে বর্তমানে শিশু রোগী বেড়েছে। আমরা নিবিড়ভাবে শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে গড়ে শতাধিক রোগী ভর্তি থাকছে।