নিজস্ব প্রতিবেদক
জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে যশোরে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করি, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে লাল কার্ড দেখিয়ে তামাক পরিহারের শপথ নিয়েছেন শহরের বিভিন্ন স্কুলের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে কালেক্টরেট চত্বরে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার। অনুষ্ঠানে তামাকজাত পণ্য সিগারেটের একটি প্রতীকী শলাকা কেটে তামাকজাত পণ্য পরিহার করার ঘোষণা দেয়া হয় এবং তামাকের বিরুদ্ধে শপথবাক্য পাঠ করান জেলা প্রশাসক। এরপর কালেক্টরেট চত্বর হতে একটি র্যালি বের হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে এসে শেষ হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘ধুমপান ও ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন দুইই ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী নেশা। তামাক সেবনে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ দেখা দেয়, যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তামাক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষতিকারক। তামাকের পরিবর্তে অন্য ফসল ফলালে দেশ এবং কৃষক উভয়ই লাভবান হবে। তামাক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবন প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব ক্ষতি এড়াতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তামাক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকবে হবে’।
পরে কালেক্টরেট অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য তার এক বছর আগেই, অর্থাৎ ২০৪০ সালের মধ্যে দেশ থেকে তামাক নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তামাক নির্মূলের একটি বৈশ্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা আছে। তামাক নির্মূল মানে তামাকের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনা নয়। কোনো দেশে তামাকের ব্যবহার ৫শতাংশের নিচে নেমে এলেই সেটাকে আমরা তামাকমুক্ত দেশ বলতে পারি। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত আইন অনুসারে বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, গুল, জর্দ্দা, খৈনি, সাদাপাতা, সিগার এবং হুক্কার মতো তামাক, তামাক পাতা বা উহার নির্যাস হইতে প্রস্তুত যে কোনো দ্রব্যকে তামাক পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এক গবেষণায় বলা হয়, তামাক ব্যবহারের কারণে বৈশি^ক মৃত্যু বছরে ৮০ লাখ। আর বাংলাদেশে মৃত্যু বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার। এই সংখ্যাটি করোনা ভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী মানুষের সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি। করোনা মহামারিতে বৈশি^ক মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ৭০ লাখ ১০ হাজার। আর বাংলাদেশে ছিলো ২৯ হাজার ৪৯৩ জন। তবে গত দুই দশকে সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগের কারণে দেশে তামাকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলে জানান বক্তারা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাসান মজুমদার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শাহীন, যশোরের সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. নাজমুস সাদিক, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি এবং দৈনিক কল্যাণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম-উদ-দ্দৌলা প্রমুখ।