স্বার্থের দ্বন্দ্বে চারিদিকে হানাহানি খুনোখুনি। ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। অনেকের লুটপাট, দুর্নীতি, অনাচারে মানুষ হতাশ। চারিদিকে নৈরাশ্যের কালো ছায়া। এমন সময়ে কারো কারো কিছু ব্যক্রিক্রমী কাজ মানুষের মনে আশার সঞ্চার করে। ওই সব মানুষগুলো হয়ে দাঁড়ান এই সমাজের বাতিঘর। যশোরের সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা সব মানুষকে নাড়া দিয়েছে। এর একটি হলো জন্ম প্রতিবন্ধী হাত পা হীন তামান্না নূরার লেখাপড়ার সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছে যশোরের রিপন অটোস। অন্যটি হলো সবার অজান্তে একজনের কাছ থেকে নেয়া ১০ লাখ টাকা ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার স্বজনদের কাছে ফেরৎ পদয়া।
তামান্না নূরার বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার আলীপুর গ্রামে। মাত্র একটি পা নিয়ে তার জন্ম। দুটি হাত ও একটি পা তার নেই। এই নূরা প্রাথমিক স্তর থেকে প্রতিটি পরীক্ষায় সাফল্যের পরিচয় দিয়ে আসছেন। এই ধারা অব্যাহত রেখে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। নূরা লেখাপড়ার সর্বোচ্চ শিখরে উঠতে চান। কিন্তু এ ইচ্ছায় বাধা হলো অর্থনৈতিক অসঙ্গতি। এমন কথাটি জেনে যশোরের রিপন অটোস তার লেখাপড়া সব দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। মহানুভবতার এ ঘোষণা দিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজাজ উদ্দিন টিপু।
কিছু দিন আগে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে খুন হন যশোর শহরের ধর্মতলার তৃতীয় লিঙ্গের লাভলী। এ হত্যাকা- সংঘটিত হবার বেশ আগে জমি কেনার জন্য ওই এলাকার মাংস বিক্রেতা নজরুল ইসলামকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। লাভলী ও নজরুল ছাড়া দ্বিতীয় কেউ এই লেনদেনের কথা জানতো না। কিন্তু ভাগ্য বিপর্যয়ে লাভলী খুন হয়ে যান। এ ঘটনার এক মাস ৫ দিন পর নজরুল ইসলাম স্বেচ্ছায় ডিবি অফিসে হাজির হয়ে লাভলীর স্বজনদের হাতে টাকা ফেরৎ দেবার কথা জানান। ডিবির তত্ত্বাবধানে লাভলীর স্বজনদের ডেকে এনে তাৎক্ষণিকভাবে দু’লাখ টাকা তুলে দেন। বাকি টাকা আসছে ৫ মার্চের ভেতর পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছেন।
সমাজের অনাচার, অবিচার, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বার্থপরতা দ্বন্দ্ব, সংঘাত অবিরত ঘটতে দেখে আমরা হতাশাগ্রস্থরা সব সময় বলি এ সমাজ চলবে না। কিন্তু রিপন অটোজ এবং নজরুল ইসলাম আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেলেন তাদের মত মানুষ আছে বলেই সমাজটা এখনো টিকে আছে। সাগরে দিকহারা জাহাজ যেমন ধ্রবতারা দেখে দিক ঠিক করে নেয় এ সমাজের মানুষের কেউ ধ্রুবতারা মত, তারা সমাজের বাতিঘর। রিপন অটোস এবং নজরুল ইসলাম যে বদান্যতা দেখিয়েছেন তাদের মত বদান্যতার গুণ হয়তোবা সবাই অর্জন করতে পারবে না। কিন্তু স্বার্থপরতা এড়িয়ে চলা কোন কঠিন কাজ নয়। যত অনাচার অবিচার সব কিছুর মূলে রয়েছে এই স্বার্থপরতা। যদি এই দোষটা এড়িয়ে চলা যায় তাহলে সমাজটা সুখি সমৃদ্ধ হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।