নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে সম্প্রতি বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে তালগাছ রোপণ নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু ১২ বছর আগে নীরবে-নিভৃতে এ কাজ শুরু করেছিলেন যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামের শিশুবর দাসের ছেলে তালগাছপ্রেমী চিত্ত রঞ্জন দাস। তিনি অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে প্রায় ৫৫ হাজার তালের চারা রোপণ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অন্যদের ফেলা দেওয়া তালের বীজ সংগ্রহ করে নিজ খরচে এসব তালের চারা রোপণ করেছেন তিনি।
বিভিন্নভাবে এই বীজ নষ্ট হয়েছে, নষ্ট হয়েছে চারাও। এমনকি গাছও নষ্ট হয়েছে কিন্তু হাল ছাড়েননি চিত্ত রঞ্জন দাস। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালগাছ রোপণ ও তার রক্ষণাবেক্ষণ করেই তিনি পরম শান্তি পান বলে জানান। ১২ বছর আগে তার রোপণকৃত তালের গাছ এখন অভয়নগরের বিভিন্ন সড়কের দু’ধারে দৃশ্যমান। বজ্রনিরোধক ও পরিবেশবান্ধব এ গাছের চারা রোপণ ও পরিচর্যা করে ইতিমধ্যে এলাকাবাসীর প্রসংসা কুড়িয়েছেন। ধোপাদী গ্রামের সড়কগুলোতে গেলে সারি সারি তালগাছ নজর কাড়বে যে কোন প্রকৃতিপ্রেমীর। ধোপাদী, বুইকারা, সরখোলার পথজুড়ে আছে চিত্ত রঞ্জনের লাগানো হাজার হাজার তালগাছ।
চিত্ত রঞ্জন দাস জানান, এখন অসংখ্য তালগাছ আছে যেগুলো বড় হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেক গাছই বড় হতে পারেনি। গাছ একটু বড় হলেই অনেকে ডাল-পাতা ছেঁটে নিয়ে যায়। তালপাখা বানানোর জন্য একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি পাতা কেটে নিয়ে যায়। আমি একদিন থাকবো না কিন্তু এই তালের চারা আমার স্মৃতি বহন করবে শত শত বছর। মূলত তাল গাছের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকেই এ গাছ লাগিয়ে তার পরিচর্যা করে আসছি। একটি তালগাছ পরিপক্ব হতে মূলত ২০ বছর সময় নেয়। এখন থেকে ধাপে ধাপে হয়তো অনেক গাছেই ফল আসবে। গাছের ছায়ায় ক্লান্ত পথিক বিশ্রাম নিবে, বজ্রপাত ঠেকাবে আর আমি অনুভব করবো।
ধোপাদী দক্ষিণ পাড়ার একাধিক কৃষক জানান, আমরা বিলে ধান চাষাবাদ করি, ঘাস কেটে বাড়ির ফেরার পথে ক্লান্ত হয়ে পড়লে চিত্ত রঞ্জনের লাগানো তালগাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিই। রবিউল নামের এক পথচারী জানান, সড়কের পাশ ধরে সারি সারি তালগাছ দেখে সত্যি অনেক ভালো লাগে।
পরিবেশ বন্ধু চিত্ত রঞ্জনের কর্ম এলাকাবাসীর নজর কাড়লেও সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এখনো পাননি নূন্যতম কোন স্বীকৃতি। তালের চারা সংরক্ষণ ও পরিচর্যায় সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি ভালো কাজের স্বীকৃতি চান এলাকাবাসী।
নওয়াপাড়া পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সলর তালিম হোসেন জানান, চিত্ত রঞ্জন দাস নিজ উদ্যোগে অভয়নগরের বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য তালের চারা নিজ রোপণ করেছেন, যা এখন দৃশ্যমান। ভবিষ্যতে এ তালগাছগুলো দেশের সম্পদ হয়ে থাকবে, তাকে এলাকাবীর পক্ষ থেকে আমি ধন্যবাদ জানায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন বলেন, আমি এক মাস হল এ উপজেলায় যোগদান করেছি। তার বিষয়টিতে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য সহযোগিতা করা হবে।
