‘টাক ইব্রাহিম’ আটক
নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন দিন পর যশোরে আফজাল হোসেন হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। বুধবার নিহতের পিতা সলেমান শেখ সন্ত্রাসী ট্যারা সুজনসহ তিনজনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ এ মামলার আসামি শহরের নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়ার ইব্রাহিম হোসেন ওরফে টাক ইব্রাহিমকে বুধবার ভোরে আটক করেছে। এই মামলার পলাতক আসামিরা হলো, নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়ার ট্যারা সুজন ও বকচর চৌধুরী বাড়ি এলাকার জাহিদ হোসেন।
বাদী মামলার এজাহারে বলেছেন, আসামি ট্যারা সুজন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি। ৭ মাস আগে নাজির শংকরপুর মাঠপাড়ায় ট্যারা সুজন ইয়াবা বিক্রি করছিল। ওই সময় বাদীর ছেলে আফজাল তাকে মাদক বিক্রিতে নিষেধ করেন। এই নিয়ে ট্যারা সুজনের সাথে তার কথাকাটাকাটি এবং হাতাহাতি হয়। ট্যারা সুজন সেই সময় থেকে আফজালকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল।
গত ২৮ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রতিবেশি সুমনের সাথে আফজাল হোসেন তার ৬ দিন বয়সের ছেলের জন্য দুধ কিনে নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিল। চাতালের মোড় সিটি মডেল একাডেমির সামনে পৌঁছলে আসামিরা চাইনিজ কুড়াল, ধারালো দা, চাকু নিয়ে আফজালের ওপর আক্রমণ করে। তার মাথার পেছনে ও ঘাড়ে কোপ মারে। এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। সে সময় আফজালের সাথে থাকা সুমন দৌড়ে চাতালের মোড়ে গিয়ে মানুষজনকে জানায়। বাদীসহ অন্যান্যরা এগিয়ে আসলে আসামিরা পালিয়ে যায়। তখন আফজালকে দ্রুত যশোরে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে বুধবার ভোরে নীলগঞ্জ এলাকা থেকে এই মামলার আসামি ইব্রাহিমকে আটক করা হয়েছে। টাক ইব্রাহিম ট্যারা সুজনের সঙ্গী হিসাবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনসহ তিনটি মামলা আছে কোতোয়ালি থানায়। টাক ইব্রাহিমও একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী।
অপরদিকে আফজাল হত্যাকাণ্ডের পিছনে তারা আছে, কী কারণে এই হত্যার ঘটনা, এর জেরে স্থানীয় কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট বাবুল কেন সন্ত্রাসী হামালার শিকার হলেন, কাউন্সিলের সাথে নিহত আফজালের দ্বন্দ্বও বা কী ছিল এইসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নাজির শংকরপুরসহ সারা যশোরে।
নাজির শংকরপুর এলাকার একটি সূত্র জানিয়েছে, মূল আসামি ট্যারা সুজনের সাথে ব্যক্তিগত বিরোধ ছিলো নিহত আফজালের। নিহত আফজালও সন্ত্রাসী প্রকৃতির ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় ১০টি মামলা আছে। ফলে তিনি এলাকায় অধিপত্য বিস্তার করে থাকতেন। আর নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়া পৌরসভার ৯ নম্ব্র ওয়ার্ডের মধ্যে। পাশাপাশি একই এলাকা হওয়ায় ট্যারা সুজনের অধিপত্যও ছিলো ওই এলাকায়। ট্যারা সুজন একবার আক্রমণের শিকার হয়েছিলো নিহত আফজালের হাতে। তখন জীবন সংকটের মধ্যে পড়ে যায় সুজন। স্থানীয় কাউন্সিলর ও এলাকার লোকজন চাঁদা উঠিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সেই থেকে ট্যারা সুজন ও আফজালের মধ্যে বিরোধ ছিল।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি নাজির শংকরপুর মুন্সি হ্যাচারির সামনে একটি ফাঁকা জমি কয়েক কোটি টাকায় বিক্রি হয়। বিক্রির শেষ সময় বিষয়টি জানতে পারেন নিহত আফজাল। ওই জমি বিক্রির মিডিয়া হিসাবে কাউন্সিলর বাবুল কাজ করেছেন বলে জানতে পারে আফজাল। আর মিডিয়াম্যান হিসাবে বেশ কিছু টাকাও পেয়ে যান কাউন্সিলর। ওই টাকার ভাগ নেয়ার জন্য আফজাল চেষ্টা করেন বলে সূত্রটি মনে করেন। সে কারণে কাউন্সিলের সাথে আফজালের সম্পর্কের তিক্ততা দেখা দেয়। যে কারণে আফজাল হত্যকাণ্ডের পেছনে কাউন্সিলর বাবুলের নাম এলাকায় চাউর হয়।