আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ, কেশবপুর (যশোর)
দীর্ঘ ৩ যুগ ধরে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে উপজেলার রামচন্দ্রপুর ঠাকুরবাড়ি চারের মাথা ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারের সময় ক্ষেপণে ৩ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। এদিকে, বর্ষাকাল শুরু হলেও ব্রিজের দু’পাশের হরিহর নদের তলদেশের মাটিও করা হয়নি অপসারণ। ফলে ভারি বর্ষণে নদের উপচে পড়া পানিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
কেশবপুর সদর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর ঠাকুর পাড়া ও ব্রহ্মকাটি শেখ পাড়ার ভেতর দিয়ে হরিহর নদের চারের মাথা হয়ে যাওয়া সড়কটি দিয়ে দিয়ে স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্রছাত্রীসহ শত শত মানুষ চলাচল করে থাকেন। মাঝপথে হরিহর নদীর চারের মাথায় ব্রিজ না থাকায় মধ্যকুল, রামচন্দ্রপুর, ব্যাসডাঙ্গা, হাবাসপোলসহ ১০ গ্রামের পথচারীসহ শিশু ও মুমূর্ষু রোগীদের ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার ঘুরে কেশবপুরে আসতে হতো। এদুর্ভোগ লাঘবে ১৯৯৮ সালে এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পাকা রাস্তাসহ হরিহর নদের ওপর ব্রিজ নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী প্রয়াত এএসএইচকে সাদেক এমপি। কিন্তু সরকারের পরিবর্তনে সেটি ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে দীর্ঘ ১৬ বছর পর এএসএইচকে সাদেক পতœী ইসমাত আরা সাদেক আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী হলে তিনি ব্রিজটি নির্মাণে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৬. ১৫ টাকার একটি প্রাক্কলন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন করান। কিন্তু ব্রিজের অ্যাপ্রোচে সরকারি জায়গা না থাকায় এর নির্মাণ কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে এলাকাবাসীর পক্ষে দীপক কুমার চক্রবর্ত্তী, স্বপন কুমার চক্রবর্ত্তী, প্রবোধ কুমার চক্রবর্ত্তী ও স্বপন কুমার চক্রবর্ত্তী ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে তাদের পৈত্রিক জমি সরকারের নামে রেজিস্ট্রি করে দিলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কেশবপুর উপজেলায় হরিহর নদের ওপর ৫৭ মিটার ব্রিজ ও রামচন্দ্রপুর মধ্যকুল মহিলা আলিয়া মাদ্রাসা হতে ঠাকুর বাড়ি চারের মাথা সড়ক নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৪ হাজার ৩২১.৩৩ টাকা চুক্তিমূল্যে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর কাজ শুরু করে ২০২২ সালের ১৬ মে সমাপ্ত করার শর্তে কাজটি পান যশোরের ঠিকাদার আনন্দ ঘোষ। কিন্তু ঠিকাদারের সময় ক্ষেপণের কারণে দীর্ঘ ৩ বছরেও শেষ হয়নি ব্রিজের নির্মাণ কাজ।
স্থানীয় দীপক কুমার চক্রবর্ত্তী অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ ৩৬ বছর জনপ্রতিনিধি ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধর্নাসহ নিজের জমি ব্রিজের অনুকূলে সরকারের নামে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার পর ব্রিজটি বরাদ্দ হয়। কিন্তু ঠিকাদারের অবহেলায় সময়মত কাজটি শেষ হয়নি। ব্রিজটি নির্মাণকালে নদীর দু’পাশে যে মাটির বাঁধ দেয়া হয়েছিল তাও অপসারণ না করে ঠিকাদার চলে যাওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বর্ষার শুরুতে বাঁধের মাটি অপসারণ না করলে ভারি বর্ষণে নদীর উপচে পড়া পানিতে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। এছাড়া, ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়কের পাশের বৈদ্যুতিক খুটি না সরালে সড়ক দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হবে।
ঠিকাদার আনন্দ ঘোষ বলেন, ২ বছরে কাজ শেষ না হওয়ায় কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এখন ব্রিজের দু’পাশে অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ চলছে। এখনও অনেক কাজ বাকি। কাজ শেষ হওয়ার আগে নদীর তলদেশের মাটি অপসারণ করা হবে।
পল্লী বিদ্যুত কেশবপুর জোনাল অফিসের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। রাস্তার পাশ থেকে পিলারটি দ্রুত সরানোর জন্যে ডিজিএমকে বলা হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম মোল্যা বলেন, বিদ্যুতের খুটি সরানোর জন্যে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসকে পত্র দেয়া হয়েছে। ঠিকাদারকে কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই সড়ক দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচলের উপযোগি করতে হলে পৌরসভার রাস্তা মজবুত করে করতে হবে।