আসাদুজ্জামান মিলন, শরণখোলা :
রোদেলা দুপুর। ঘন বনানীতে ঘেরা শরণখোলা রেঞ্জের চান্দেশ্বর ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির নীরব পুকুর পাড়। হঠাৎ সুন্দরবনের সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী দু’টি বাঘের উপস্থিতি। দু’টি বাঘের খুনসুটি, রঙ্গলীলা আবার ক্লান্ত বাঘের পুকুর পাড়ে নেমে পানি পান। কিছুক্ষণ পর তাদের সাথে যোগ দেয় আরো একটি বাঘ। একই সাথে ৩টি বাঘের সদর্প বিচরণ ও অফিস এলাকা দাপিয়ে বেড়ানোর এ দৃশ্য দেখে হতবিহব্বল হয়ে পড়ে অফিসে কর্মরত পাঁচ বনরক্ষী। তারা দ্রুত অফিসে আশ্রয় নিয়ে দরজা আটকে দেন। শুক্রবার দুপুর থেকে চরম আতংকের মধ্যে জানালা থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে ২০ ঘন্টা শ্বাসরুদ্ধ ও ভীতিকর সময় পার করেছেন ওই বনরক্ষীরা। পরে উপরস্থ কর্মকর্তাদের পরামর্শে টিন পিটিয়ে শব্দ করায় শনিবার সকালে বাঘ তিনটি বনের ঘন সবুজে মিলিয়ে যায়। তবে বনরক্ষীদের আতংক এখন ও কাটেনি।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের চান্দেশ্বর ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার শেখ ফারুক আহমেদ অবরুদ্ধ অবস্থায় মোবাইল ফোনে বলেন, শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে সুন্দরবনের গহীন থেকে দুইটি বাঘ চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ির পুকুর পাড়ে এসে পুকুরের মিষ্টি পানি পান করে। পুকুর পাড়ে গড়াগড়ি এবং নিজেদের মধ্যে খুনসুটি, ছোটাছুটি করে সারা বিকেল পার করে। সন্ধ্যার পরে আরো একটি বাঘ এসে যোগ দেয় তাদের রঙ্গ লীলায়। বাঘ তিনটি বনরক্ষীদের পুরোনো ব্যারাক ও রান্নাঘরের নিচে এসে অবস্থান শেষে শনিবার খুব সকালে আবার পুকুর পাড়ে অবস্থান নেয়। বেলা ১১টার দিকে বাঘগুলো আপনমনে রাজকীয় চালে বনের গহীনে চলে যায়।
শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা সুফল রায় জানান, বর্তমানে বাঘের প্রজনন মৌসুম চলছে। সুন্দরবনের তিনটি বাঘ অফিস চত্বরে এসে মিলিত হয়। মিলিত হয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই আবার বনে চলে যায়। তবে সুন্দরবনে এ দৃশ্য দেখা একটি বিরল ঘটনা।
শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা শামসুল আরেফিন জানান, বাঘেরা সাধারণত ঘন বনের মধ্যে তাদের প্রজননের কাজ করে থাকে। সেক্ষেত্রে এ ঘটনাটি একটু ব্যাতিক্রম। বাঘের প্রজনন কাজ যাতে কোন ভাবে বিঘিœত বা বাধাগ্রস্থ না হয় সে জন্য বনরক্ষীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সর্তকাবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এখন সেখানকার পরিবেশ স্বাভাবিক বলে জানান তিনি।