শাহারুল ইসলাম ফারদিন
তীব্র গরমে ঘরে ঘরে অসুস্থতার খবর মিলছে যশোরে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক লোক বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। চিকিৎসকেরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ। সাধারণ ফ্লুর মতো এসব ভাইরাস রোগের লক্ষণ দেখা দিলেও জটিলতার আশঙ্কা বেশি থাকে। সতর্ক থাকলে এসবের জটিলতা এড়ানো সম্ভব। সুতরাং জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শনিবার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সূত্র মতে, গত দশ দিনে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৬৯ শিশু। এ ওয়ার্ডে গত শনিবার নতুন করে ভর্তি হয় ৪৯ জন, শুক্রবার ৫৩, বৃহস্পতিবার ৫৭ জন শিশু রোগী। এছাড়াও প্রতিদিন হাসপাতালের বহিঃবিভাগে গড়ে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিনশ রোগী জ¦র ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়ে ব্যবস্থাপত্র নিচ্ছেন। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগী বেশী। তবে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। গত শনিবার হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৯ জন। এছাড়াও গত একমাসে যশোর শিশু হাসপাতালের ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯২২ শিশু।
শহরের কারবালা রোডের মাহবুবুর রহমান জানান, পরিারের চার সদস্যের মধ্যে দুই জন প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত। এর মধ্যে শিশু পুত্র বেশ কয়েকদিন যাবৎ জ্বরে ভুগছে। সদরের আব্দুলপুর থেকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা তাছলিমা বেগম জানান, গত ৩-৪ দিন ধরে তার শিশুর জ্বর হয়েছে। তাই ডাক্তারের কাছে ওষুধ নিতে এসেছেন। তিনি আরো জানান, তাদের আশপাশের অনেকেরই জ্বর দেখা দিয়েছে। শহরের রেল রোড এলাকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঘরের তিনজনই অসুস্থ। শহরের কাঠালতলা মোড়ের বাসিন্দা শাকিল হোসেন বলেন, হঠাৎ জ্বর। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, করোনা নেই। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন ভাইরাস জ্বর।
যশোর শিশু হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) সৈয়দ নূর ই হামিম জানান, জ্বর একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এটা সাধারণত ৩-৫ দিন স্থায়ী হয়। এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। সাধারণত ঠান্ডাস্থানে রাখতে হবে। কিছু সময় পর পর শিশুর শরীর মুছে দিতে হবে। কেউ আক্রান্ত হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ৬ ঘণ্টা পর পর খাওয়ানো যেতে পারে। এতেও সুস্থ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বলে জানান তিনি।
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু-কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, তাপমাত্রার দ্রুত পরিবর্তন, রোদের তাপ বা গরমে ঘাম, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বেরিয়েই প্রচণ্ড গরম, আবার প্রচণ্ড গরম থেকে এসে খুব ঠান্ডা পানি বা বরফ পানি পান করা, এসব কারণে গরমে ঠান্ডা-জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে এমন সমস্যা। অ্যালার্জি ও ভাইরাস সংক্রমণের কারণে গরমে ঠান্ডা লেগে জ্বর হতে পারে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভাইরাসের কারণে জ্বর হলে সাধারণত সাত দিনের মধ্যে এমনিই ভালো হয়ে যায়। হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে নাক-মুখ থেকে অন্তত ছয় ফুট দূরত্ব পর্যন্ত ছড়াতে পারে এ ভাইরাসগুলো। আর প্রকৃতিতে বেঁচে থাকতেও পারে বেশ কয়েক ঘণ্টা। এ ছাড়া হাত দিয়ে নাক মোছা বা নাক-মুখে হাত দেওয়ার পর সেই হাত দিয়েই অন্যজনের কাছে ছড়ায়।
এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশীদ জানান, বেশ কিছুদিন যাবৎ স্বর্দি জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই এই সব রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। নিত্যদিনই সর্দি জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া জনিত কারণে এখন সর্দি-কাশি জ্বর হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার এই জ্বরের প্রকোপ অনেক বেশি। জ্বরের উত্তাপ বেশি হলে রোগীর মাথায় প্রচুর পানি ঢালতে হবে। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ মাত্রা মতো খেলে ৩-৪ দিনের মধ্যে বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। সর্দি জ্বর প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
যশোরে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল বলেন, এ জ্বরে মানুষ সাধারণত প্যারাসিটামল ও সর্দি-কাশির ওষুধে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তাই বলে কোনো জ্বরকেই হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। পূর্ণবয়স্ক একজন নারীর দিনে অন্তত ২.৫-৩ লিটার, পূর্ণবয়স্ক একজন পুরুষের ৩-৩.৫ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। তবে কিডনি রোগীদের অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেই পানির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। গরমে লেবু বা ফলের শরবত খাওয়া খুবই উপকারী। ডাবের পানিও খুব দারুণ কার্যকর। এসব পানীয় খুব সহজেই শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করবে। ডাবের পানি ও ফলের শরবত খেলে পানির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় খনিজ লবণের চাহিদাও পূরণ হবে। কাঁচা পেঁপে, পটল, ধুন্দল, শসা, চিভিঙ্গা, গাজর, লাউ, পেঁপে, পালংশাক, টমেটো, শসায় পানির পরিমাণ বেশি থাকে। পানিশূন্যতা দূর করতে এই খাবারগুলো অবশ্যই খাবার তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন। ঝাল, বাইরের খোলা শরবত, বাইরের খাবার, ভাজাপোড়া এ সময় এড়িয়ে চলতে হবে।