যদিও সবাই বলে থাকে নারী বর্তমানে স্বাধীন। হ্যাঁ স্বাধীন, তবে একটু ভেবে দেখা উচিত এই স্বাধীন শব্দটি কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নাকি বাহ্যিক থেকে দেখা যায় স্বাধীন। কিন্তু মানুষের চিন্তা চেতনায় পূর্ব যুগের ধারণা এখনও বিরাজমান। অর্থাৎ মৌখিকভাবে স্বাধীন।
নাজমুন নাহার রিনু: সন্তানরা বলে, তুমি পারবে না। স্বামী বলে, তোমার মাথায় বুদ্ধি নেই। তোমার দ্বারা কিছু হবে না। আর শ^শুর-শাশুড়ি বলে, তুমি একটু কম কথা বল, চুপ করে থাকো। তুমি বোঝো না, তুমি এটা পারবে না। এমন কথা শুনতে হয় অধিকাংশ সময়।
আমি নারী, আমি সব পারি তা কিন্তু নয়। সীমাবদ্ধতা আছে সকলের । এই জন্যই কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, এ বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ তারপর নারীকে তুচ্ছ ভাবা হয় নারী হবে শান্ত, নম্র, ভদ্র, কোমলপদ্ম। সাত চড় খাবে তবুও মাথা নত করে থাকবে ঘরের এক কোণে। এমনও মানসিকতা পোষণ করে এখনও মানুষ। যদিও সবাই বলে থাকে নারী বর্তমানে স্বাধীন। হ্যাঁ স্বাধীন, তবে একটু ভেবে দেখা উচিত এই স্বাধীন শব্দটি কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নাকি বাহ্যিক থেকে দেখা যায় স্বাধীন। কিন্তু মানুষের চিন্তা চেতনায় পূর্ব যুগের ধারণা এখনও বিরাজমান। অর্থাৎ মৌখিকভাবে স্বাধীন। যেমন লাটাই হাতে ঘুড়ি উড়িয়ে দিয়েছে আকাশে। অন্যের হাতে ক্ষমতা। সময় হলে ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। ঠিক তেমনি নারীর ওপর সকল প্রকার কর্তৃত্ব, আধিপত্য বিস্তার করার সুযোগের খোঁজে থাকে কিছু মানুষ।
প্রথমে বলতে গেলে আমরা অনেকেই জানি, সন্ধ্যা ৭ বা ৮ টা সময় কোন একটি মেয়ে রাস্তায় একা হেঁটে গেলে, মেয়েটিকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করা হচ্ছে, কু-ইঙ্গিত করা হচ্ছে, এমনকি সুযোগ পেলে ধর্ষণ করা হচ্ছে। রাত বা দিন পথে যদি একা হাঁটতে না পারি তাহলে কিসের স্বাধীনতা।
যদিও বলা যায়, নারীরা বর্তমানে চাকরিতে, ব্যবসায় দুটি দিক থেকে অত্যাধিক এগিয়ে আছে। উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গেছে নারীরা। আজকের দুনিয়ায় এমন কোনও কাজ নেই যা মেয়েরা পারে না বা করছে না।
তারপরও কোথায় যেন তারা শৃঙ্খলবদ্ধ। বর্তমানে চাকরিতে উন্নতি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এমনও নারী আছেন যারা চাকরিতে উন্নতি করার জন্য অথবা চাকরিতে টিকে থাকার জন্য ইচ্ছা অনিচ্ছা স্বত্তেও পণ্যের মত ব্যবহৃত হচ্ছেন। আবার অভাবের সুযোগ নিয়ে অনেক নারীকে চাকরি দেয়ার নামে অশ্লীল কার্যক্রম করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ঘরের বাইরে পা রাখতে হলে সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হয়। পথে কোন রাক্ষস ওত পেতে রয়েছে কাকে গিলে খাবে, কোন নারীকে কিভাবে নিজের খোয়াড়ে বন্দি করবে। আবার নারীরা বাধ্য হয়ে অভাবের তাড়ানায়, সংসার চালনার জন্য অথবা কুলাঙ্গার স্বামীর কারণেও নিজেকে অসভ্য মানুষের কাছে সপে দিচ্ছেন। কারণ তাদের সঠিক কাজ দেয়া হচ্ছে না। নায্য বেতন দেয়া হয় না। কাজের নামে ফায়দা লুটছে মন্দ চরিত্রের মানুষ। পরিবারও বেশি লেখাপড়া না শিখিয়ে বিয়ে দিয়েছে। স্বামী প্রতিনিয়ত করছে নির্যাতন। বিভিন্ন কারণবশত তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে মন্দ কার্যক্রম বেছে নেবার।
সবকিছুর মূলে রয়েছে দৃষ্টিভঙ্গী। নারীকে কেবলমাত্র নারী ভাবা হয়। মানুষ ভাবা হয় না। মানুষ ভাবলে তার কাজের নায্য মূল্যায়ন করা হতো। পুরুষ যখন কাজ করছে বাইরের পরিবেশে তাকে কেউ উঁচুতে উঠার লোভ দেখিয়ে ব্যবহার করছে না। নারীকে চাকরি করতে গেলে বিভিন্নভাবে অসম্মানিত হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
নারী যদি কোনো সময় অসুস্থ হয় তখন তার প্রতি করা হয় অবহেলা। স্বামীর সংসারে অনেক সদস্য বলে থাকেন মেয়েদের এত অসুখ হবে কেন? আর দীর্ঘদিন অসুখে ভুগলে স্বামীকে আর একটি বিয়ে দিতে হবে পরিবারের সদস্যরা এমন বলে থাকেন। আর যারা চাকরি করেন তাদের জটিলতার শেষ নেই। তারা সংসারের কাজ শেষ করে তারপর চাকরিতে যান। স্বামী, স্ত্রী দুজনই সংসারের খরচ চালান। তারপরও কোথায় যেন সংকট থেকে যায়।
যেখানে নারী এখন কারও ওপরে নির্ভরশীল নয় উল্টে তাদের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে পরিবার। আবার কখনও তাদের ওপরেই নির্ভর করছে কোনো দেশের ভাগ্য। সেখানে আজও নারীর প্রতি কত আঙুল তোলা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নারীকে করা হচ্ছে অসম্মান।
যাই বলি না কেন সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে নারীর উন্নয়ন হবে না কোনো কালে। প্রথমে নারীকে একজন মানুষ ভাবা উচিত।