* যশোরের বাজারে বেড়েছে সব ধরনের ফলের দাম
* ভালো মানের খেজুর কেজি ১০০০ টাকা
* শসা কেজি ১০০ টাকা, লেবু ডজন ৫০
* পেঁয়াজ করেছে সেঞ্চুরি
* চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের বাজারে চিনি, খেজুর, সয়াবিন তেল, ছোলাসহ ইফতারসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন পদের ডালের দাম বেড়েছে। এ বছর এসব পণ্যের প্রায় সবগুলোর দামই চড়া। এর মধ্যে চিনি ও তেলের দাম এক বছরের বেশি সময় ধরে বাড়তি। তার সঙ্গে এবার খেজুর, ছোলা ও ডালের দামও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া পেঁয়াজ, বেগুন, শসা ও লেবুর দামও চড়া। বিদেশি ফলের দাম নাগালের মধ্যে নেই। তাতে ইফতার আয়োজনে সাধারণ মানুষকে এবার খরচ সামলাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রশাসন বারবার হুশিয়ারি দিয়েছে। দুই-একটি অভিযানও চালিয়ে। কিন্তু দামের ঊর্ধ্বগতি থামানো যায়নি। নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি বাজার ব্যবস্থা।
শহরের বড় বাজারের মুদি দোকানি আশিষ সাহা জানান, গত তিন বছরের মধ্যে এবারই রোজার বাজারে চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ ও অ্যাংকর ডালের দাম সবচেয়ে বেশি। ২০২২ সালে রোজার আগে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এ বছর চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। তাতে এক বছরে চিনিতে খরচ বেড়েছে সর্বনিম্ন ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ টাকা।
২০২১ সালে রোজার আগে বাজারে ছোলার দাম ছিল কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। এ বছর দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তাতে দুই বছরের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ২৫ থেকে ৪০ টাকা।
তিনি বলেন, রোজার আগে ছোলা ও বিভিন্ন ধরনের ডালের দাম বাড়তি। বেসনের দামও বেড়েছে। বর্তমানে কেজিপ্রতি বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আগে ছিল ৮০ টাকা।
গত দুই বছরে বাজারে অ্যাংকর ডালের দাম বেশ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। গত বছর এ দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আর ২০২২ সালের রমজানের আগে অ্যাংকর ডালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। বাজারে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। গত বছর প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ২০২২ সালে এ দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মুড়ি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। আগে ছিল ৭০ টাকা। লেবু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা হালি। দেশি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। যদিও বাজারে হাইব্রিড লেবুর সরবরাহ বেশি।
শহরের দড়াটানা ফলপট্টি এলাকার সোহেল ফল ভান্ডার, মনি ফল ভান্ডারসহ বেশ ককেটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, মেজদুর খেজুর বর্তমান বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকা, যা মাস খানেক আগে ছিলো ১২০০ টাকা, মরিয়ম বিক্রি হচ্ছে ১১শ থেকে ১৪শ টাকা, আগে ছিলো ৮শ থেকে ১১শ টাকা, আজুয়া বিক্রি হচ্ছে ১২শ টাকা, আগে ছিলো ৯শ টাকা, ছক্কাবারী বিক্রি হচ্ছে ৮শ টাকা, আগে ছিলো ৫শ ৫০ টাকা, ফরিদা ও ছাপারী বিক্রি হচ্ছে ৮শ টাকা, আগে ছিলো ৫শ টাকা, দাবাজ ও মেট ক্রাউন বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে ৫৫০ টাকা, যা আগে ছিলো ৩৫০ টাকা, নরমাল খেজুর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২শ থেকে ২২০ টাকা, যা মাস খানেক আগে ছিলো ১৮০ টাকা।
এদিকে আপেল বর্তমান বিক্রি হচ্ছে ৩শ টাকা, যা মাস খানেক আগে ছিলো ২৮০ টাকা, কমলা বিক্রি হচ্ছে ২৫০শ টাকা, আগে ছিলো ২শ টাকা, ন্যাসপতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০শ টাকা, আগে ছিলো ২৮০ টাকা, আঙ্গুর বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা, আগে ছিলো ২৫০ টাকা।
শহরের দড়াটানা ফলপট্টি এলাকার মনি ফল ভান্ডারের মনির হোসেন বলেন, আমি গত ১০ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করি। প্রতি বছর যেটা হয়, রোজার সময় ফলের চাহিদা বেড়ে যায়। অন্তত পঞ্চম রোজা পর্যন্ত ধনী-গরীব সবাই চেষ্টা করে ইফতারে ফলের আইটেম রাখতে। চাহিদা বেড়ে যায়, সেজন্য দামও বেড়ে যায়। প্রতি বছর রোজার আগেই অল্প অল্প দাম বাড়তে থাকে। কিন্তু রোজার ২-৩ দিন আগেই মূলত দাম হুট করে বাড়ে। তবে এ বছর রোজা শুরুর ১০-১২ দিন আগেই এক লাফে পাইকারি বাজারে সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে। বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, এখন ফলের চাহিদা আছে। যারা কিছুটা স্বাবলম্বী তারা আগে থেকেই রোজার বাজার করে ফেলছেন। দেখা যায়, ফলও কিনে নিচ্ছেন।
তার দোকান থেকে ফল কিনছিলেন স্কুল শিক্ষক রোকসানা খাতুন। তিনি বলেন, রোজায় ফলের বিশাল চাহিদা থাকে। রোজা রেখে কমলা, বেলের শরবত এগুলো খেতে ভালো লাগে। তাই আপেল, খেজুর, কমলা ও বেল কিনে নিচ্ছি। তবে ফলের দাম আগুন। যেখানে দুই কেজি কেনার ইচ্ছে ছিলো সেখানে এক কেজি কিনেছি। আমরা তো যাইহোক কেনাকাটা করতে পারছি নিম্নবিত্তদের সাধ্যের বাহিরে চলে গেছে। তাই আমার বাড়ির কাজের মেয়ের জন্যও কিছু ফল কিনলাম।
ফল কিনতে আসা শহরের পুলিশ লাইন এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছর রোজার প্রতি সপ্তাহে ফল কিনতাম। এবার গতবারের তুলনায় সব ধরনের ফলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি রোজা সামনে রেখে বিক্রেতারা হঠাৎ করেই দাম আরও বাড়িয়েছে। তাই সংসারের সব খরচ মিটিয়ে এখন আর ফল কেনা হয় না। কিন্তু রোজা রেখে ইফতারে ফল না রাখলে চলে না। তবে এবার উচ্চমূল্যের কারণে মনে হচ্ছে ইফতারে ফল রাখা হবে না।
সবজি বিক্রেতা শংকর কুমার জানান, বাজারে সব ধরণের সবজির দাম চড়া। বিশেষ করে রমজানে চাহিদা বাড়ে শসা ও বেগুনের। বর্তমানে বেগুন কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। এক মাস আগেও ছিল ৪০ টাকা। দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। শসা বিক্রি হচ্ছে একশ টাকা কেজিতে। কয়েকদিন আগে ছিল ৬০ টাকা।
যশোর নাগরিক সংঘের সমন্বয়ক আলী আজম টিটো বলেন, বর্তমান বাজার ব্যবস্থা অস্বাভাবিক। সেই সাথে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। এজন্য আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি- যে জিনিসের দাম বাড়বে সেই জিনিস বয়কট করতে হবে। অতিপ্রয়োজন ছাড়া পণ্য কেনা যাবেনা। তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা আর সুবিধা করতে পারবেনা।
যশোরের বাম রাজনীতিক ইকবাল কবির জাহিদ জানান, মূলত বাজার ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রনে নেই। সরকারের বেশিরভাগ এমপি হলেন ব্যবসায়ী। যেকারণে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। যার মাসুল দিতে হচ্ছে ভোক্তাদের।