নিজস্ব প্রতিবেদক
চিচিংগে, বাতাসা, ঢেঁড়স, ফুলুরী চার ভাই পড়াশুনা না করে সবসময় দুষ্টুমী আর খেলাধুলায় মশগুল থাকে। তাদের বাবা শতচেষ্টা করেও পড়াশুনায় মনোনিবেশ করাতে ব্যর্থ হয় বারংবার। চিচিংগে বাহিনী নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করে পড়ালেখা না করবার জন্য। ভাগ্নেদের মানুষ করার দায়িত্ব নেয় মামা, যদিও মামা নিজেও লেখাপড়ায় খুব একটা ভালো না। সেই মামাকেও নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে ভাগ্নেরা। এমনকি পড়াশুনা না করবার জন্য বাবার মৃত্যু কামনা পর্যন্ত করে বসে ফুলুরী। এখানেই ঘটে পট পরিবর্তনের সূত্রপাত। না বুঝে বাবার মৃত্যু কামনাকারী ফুলুরীকে খুব বকাঝকার মাধ্যমে বাবার প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ পায় এবং সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মামার পরামর্শে বাবা আত্মহত্যার অভিনয় করে। তখন চিচিংগে বাহিনী কোনভাবেই বাবাকে বিষ খেতে দেবেনা বরং ঠিকমত লেখাপড়া করবে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
‘চিচিংগে এন্ড কোং’ নাটকের মূল কাহিনী এমনই। নাট্য সংগঠন বিবর্তন যশোরের ২০ জন খুদে অভিনেতা-অভিনেত্রী অভিনীত এই নাটক দেখে মুগ্ধ হয়েছে উপস্থিত দর্শকরা। রাধারমন ঘোষের রচনায় নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন মানস বিশ্বাস। শুক্রবার রাত ৭টায় যশোর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। বড়দের পাশাপাশি সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সবার সন্তান সৃজনশীল মানবিক মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠার প্রত্যয়ে বিবর্তন যশোর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই নাটকের পর মৃন্ময় চক্রবর্তী ও সৈয়দ শাহিনুর রহমানের নাট্যরুপ ও নির্দেশনায় সুকুমার রায়ের পাগলা দাসু নাটক মঞ্চস্থ হয়। এই দুই নাটকের ফাঁকে ছিল শিশুরা কবিতা আবৃতি করে।
নাটকটির নিদের্শক মানস বিশ্বাস বলেন, আধুনিকায়নের এই সময় বাবা-মা চাই তার সন্তান শুধুই লেখাপড়া করে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা সংস্কৃতি চর্চা এগুলো যে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তা তারা ভুলতে বসেছে। ফলে আজকের শিশু হয়ে পড়েছে যান্ত্রিক এবং আটকে পড়েছে বিশ্বের অর্থপিপাসু কুৎসিৎ মানুষদের সৃষ্ট ডিজিটাল গেমের জালে। এই মরণ ফাঁদ থেকে শিশুদের বাঁচাতে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহ দিতে হবে যার যার অবস্থান থেকে।
সন্তানদের ভালো মানুষ হওয়ার সুযোগ তৈরী করে দেওয়ার দায়িত্ব আপনার আমার সকলের। তাইতো চিচিংগে বাহিনীকে নিয়ে এই শিশুতোষ নাটক।
চিচিংগে এন্ড কোং নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে নিলাদ্রী বিশ্বাস, অর্পন সাহা, আরিয়ান মুগ্ধ, দেবজ্যোতি দে, প্রসুন বিশ্বাস, আদিত্য রায়, সৌরভ অধিকারীর অভিনয় দর্শকদের মন কেড়েছে।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় সম্প্রতি মারা যাওয়া সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোটের সভাপতি সুকুমার দাস স্মরণে। সেই সাথে অনুষ্ঠানের শুরুতে এক মিনিট নিবরতা পালন করা হয়।